সুন্দরবনের কচিখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা থেকে হরিণ শিকারের ৩০০ ফাঁদসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বন বিভাগ।
সোমবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী এলাকার সুখপাড়া খাল সংলগ্ন বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
আটক আরিফুল ইসলাম দুলাল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কোরাইল্যা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
অভিযানে ওই বনাঞ্চলে পেতে রাখো হরিণ শিকারের ৩০০ মালা ফাঁদ, ১টি ছুরি, ১টি করাত, ১০০ ফুট প্লাস্টিকের রশিসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বৃষ্টির মাঝে কাঁদাপানি উপেক্ষা করে বনের মঝে পায়ে হেটে টহল কালে শরণখোলা স্মার্ট পেট্রোলিং দল সুখপাড়া খাল সংলগ্ন বনাঞ্চল থেকে ওই ব্যক্তিকে আটক করে। সেখানে ফাঁদ পাতাতে আসা আরও দুজন এ সময় বনের মাধ্যে পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
আটক আরিফুল ইসলাম দুলাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার করেছে তারা পাথরঘাটার হরিণ শিকারি চক্র নাসির গ্যাং এর সদস্য। নাসির বন বিভাগীগের তালিকাভূক্ত অপরাধি (হরিণ শিকারি)।
সূত্র বলছে, পাথরঘাটার একাধিক চক্র সুন্দরবনে হরিণ শিকারের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে জ্ঞানপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় শক্তিশালী হরিণ শিকারি সক্রিয় রয়েছে। বলেশ্বর নদের পূর্বপাড়ে পাথরঘাটা উপজেলা, আর পশ্চিমে সুন্দরবন। রাতের আঁধারে নদী পার হয়ে শিকারিরা বনে প্রবেশ করে। বেশ কিছু চক্র হরিণ শিকারের জন্য তাদের সদস্যের ট্রলারে করে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। তারা হরিণ ধরে খবর দিলে আবার রাতে গিয়ে ট্রলারে করে নিয়ে আসে।
অপর একটি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক কিছু সেল্টারও পাচ্ছে শিকারি চক্রগুলো। পাথরঘাটনার ওই চক্রগুলোর সঙ্গে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু ব্যক্তি জড়িত। একবার ফাঁদ বনে নিয়ে গেলে শিকারিরা সেই ফাঁদ অধিকাংশ সময় আর নিয়ে ফিরে না। বনের মাঝেই লুকিয়ে রেখে আসে, যা পরে গিয়ে আবার ব্যবহার করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফাঁদ ছাড়াও শিকারে এক ধরণের চেতনানাশক ব্যবহার করছে একটি চক্র।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী প্রজনন মৌসুম ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ১ জুন থেকে বনে প্রবেশ চলছে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে বনজীবী, পর্যটকসহ সবারই বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ।
ডিএফও মো. রেজাউল করিম বলেন, হরিণ শিকার, বিষ দিয়ে মাছ ধরাসহ সব ধরণের বনঅপরাধ দমনে সর্বচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। দুর্গম সুন্দরবনে পায়ে হেটে টহল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে বাঘ-কুমির, সাপসহ বন্যপ্রাণীর আক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাঁর মাঝেও আমরা এ ধরণের অভিযান অব্যহত রেখেছি। ফলে গেল দুই মাসে ৩ হাজারের বেশি হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার হয়েছে।
সুন্দরবন-সংলগ্ন শরণখোলার স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বনে হরিণ শিকার এবং ফাঁদ পাতার ঘটনা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর জন্য মূলত দায়ী হরিণের মাংসের চাহিদা। অনেক সাহেব, ভদ্র লোকেরাই হরিণের মাংসে খেতে চায়। এখন আগে থেকেই টাকা দিয়ে রাখে হরিণের মাংসের জন্য। ইয়াবা, গাঁজার মত গোপনে হরিণের মাংস পৌঁছে দেয় শিকারি চক্র।
সাম্প্রতি সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ শিকারের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে গেছে। ফলে ফাঁদ উদ্ধারের ঘটনা এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এই যে ফাঁদ ধরা পড়ছে, এগুলো কিন্তু নতুন আসেনি। অধিকাংশই আগে থেকে বনের মাঝে ছিল। রাতের বেলা বনে ঢুকে তারা শুধু নতুন করে পেতে রাখছে। এদের প্রতিহত করতে হবে। এজন্য বন বিভাগের জনবল, নৌ-যানসহ লজিস্টিক বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিও বাড়াতে হবে।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More