
ঘড়িতে তখন দুপুর সাড়ে ৩ টা। গ্রীষ্মের দুপুরে প্রচন্ড গরম চলছে এ সময়টাতে। বাগেরহাট জেলা স্টেডিয়ামে আরচ্যারি প্রশিক্ষনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আকাশ, বৈশাখী, রাহাত, ইরাসহ আরও অনেক শিক্ষার্থি। লক্ষভেদ করার চেষ্টাতে ঘেমে একাকারও হয়েছে অনেকে। তাই কোচ একটু বিশ্রাম নেয়ার অনুমতি দিলেন সবাইকে।
বিদ্যালয়ের ও বাইরের অন্যান্য সকল প্রতিযোগিতায় গানে পুরষ্কার ছিল ওর নিত্যসঙ্গী। বিদ্যালয়ের প্রত্যহিক সমাবেশে প্রায় ৮০০-৯০০ শিক্ষার্থি ওর সাথে জাতীয় সংগীতে গলা মিলায়। ছাত্র হিসাবেও বেশ ভাল সে।
অষ্টম শ্রেণির জে.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পায় অঙ্কন। ছবি আকাতেও আছে ওর বিশেষ দক্ষতা। কিন্তু এগুলোর জন্য ও এতটা আলোচিত হয় নি, যতটা এই আরচ্যারি গ্রাউন্ডে হয়েছে। অঙ্কনের পিতা অনুপ কুমার ঘোষ, পেশায় ব্যাংকার। মা রেবা রানী ঘোষ, গৃহিনী।
২০০৬ সাল। যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশন। অন্যান্য স্থানের মত ধারাবাহিকভাবে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আসে শিক্ষার্থিদের বাছাই করে আরচ্যারি তে টিম করতে।
তখন সেপ্টেম্বর ২০১২। একটু কৌতুহল বশেই নতুন এ তীর-ধনুকের কৌশুলি কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নেয় ৯ম (বর্তমানে ১০ম) শ্রেণির আকাশ, রাহাত, অঙ্কন মামুন ও আরো অনেকে।
সারাদেশ থেকে এভাবে শিক্ষার্থিদের নিয়ে আরচ্যারির কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীনফোন- বিগিনার্স আরচ্যারি ট্রেনিং কোর্স। বাগেরহাটে কোচ সুয়াদ রিফাদ সানজিদের তত্ত্বাবধানে এর কার্যক্রম চলে বাগেরহাট জেলা স্টেডিয়ামে। এ কোর্সে অঙ্কন একটি সিলভার ম্যাডেল অর্জন করতে পারে। গোল্ড পায় রাহাত। মেয়েদের ভিতর গোল্ড পায় বৈশাখী, আর সিলভার পায় ইরা।
ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর ঘুরেছে। জানুয়ারি ২০১৩। সব যোগ-বিয়োগের হিসাব মিটিয়ে অঙ্কনের হাতে ধরা দেয় ওর স্বপ্ন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গ্রামীনফোন- বিগিনার্স আরচ্যারি ট্রেনিং কোর্স ফাইনালে সারাদেশের ১০ জেলা থেকে ২ জন ছেলে ও ২ জন মেয়ে করে মোট ৪০ জন অংশ নেয়ার সুযোগ পায় যারা প্রত্যেকেই পূর্বে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিকভাবে বিগিনার্স আরচ্যারি ট্রেনিং কোর্সে পুরস্কারপ্রাপ্ত।
বাগেরহাট থেকে অংশ নেয় বাগেরহাটের অঙ্কন, রাহাত ও ইরা। তবে ব্যক্তিগত কারণে বৈশাখী যায়নি।
মেয়েদের বিভাগে গোল্ড ম্যাডেল পায় কিকি প্রু মারমা (বান্দরবান)।
এরপর ৮ম বাংলাদেশ গেমস-২০১৩ তে আরচ্যারি ইভেন্টে ভালো পার্ফরম্যান্সের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয় U-16 আরচ্যারি দলের জন্য প্রাথমিকভাবে ডাক পায় অঙ্কন।
আর কিছু দিনপর চুড়ান্ত ভাবে U-16 জাতীয় দলের জন্য ৫ জনের মধ্যে নির্বচিত হয় অঙ্কন। এখানে অতিথি কোচ হিসাবে এদের বাছাই করেন কোচ কিম জিয়ং হু (কোরিয়া) ও বাংলাদেশ জাতীয় আরচ্যারি দলের কোচ মি. নিশিথ দাস (ভারত)।
সব বাধা পেরিয়ে অঙ্কন এখন বাংলাদেশ জাতীয় U-16 আরচ্যারি দলের একজন খেলোয়াড়।
অঙ্কনের সপ্ন এখন ২০১৪ ইয়ুথ অলিম্পিক। বাংলাদেশ U-16 দল থেকে অংশ নেবে ১ জন ছেলে ও ১ জন মেয়ে। এ ব্যাপারে আশাবাদী অঙ্কন।
অঙ্কন ঘোষ অর্ঘ্য জানায়, “একবার যখন আরচ্যারিকে ভালবেসেছি, তখন যতদুর সম্ভব একে আকড়ে রাখব। আশা করি আমাদের আরচ্যারি আরও বহুদুর এগোবে”।
কোচ সুয়াদ রিফাদ সানজিদ আরচ্যারি ও অঙ্কন নিয়ে জানান তার আশার কথা। তিনি বলেন, “ওরা সবাই দারুন পরিশ্রমী ও মেধাবি। আমার বিশ্বাস অঙ্কনসহ প্রত্যেকেই আরচ্যারির মাধ্যমে দেশে কৃতিত্ব বয়ে আনবে”।
অঙ্কন আরচ্যারিতে তার সফলতার পেছনে বাংলাদেশ জাতীয় আরচ্যারি দলের কোচ মি. নিশিথ দাস, বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বাগেরহাট পৌরসভাকে বিশেষ কৃতজ্ঞ জানান। সে তার জীবনের সর্বাঙ্গীন কল্যান ও আরচ্যারির মাধ্যমে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে সবার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছে।
তার এই সাফলে বাগেরহাটবাসীর পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
১৪ আগোষ্ট ২০১৩:: সুমন বিশ্বাস, শিশু সাংবাদিক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More