নদী পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধ ও নৌযানে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে লাইটার (ছোট আকারের পণ্যবাহী) জাহাজের শ্রমিকরা।
শনিবার সকাল থেকে দেশের সব রুটে পণ্যবাহী জলযান চলাচল বন্ধ রেখে এ কর্মসূচি পালন করছেন লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের এ কর্মবিরতির কারণে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত পণ্যবাহী সব জাহাজে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। তবে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক।
এদিকে শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ফলে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সারাদেশের সাথে নৌ পথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের মংলা শাখার সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তনুযায়ী সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টিকালে কর্মবিরতি চলেছে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর, গজারিয়া, ষাটনল থেকে মেঘনা সেতু, নারায়নগঞ্জের বৈদ্যেরবাজার থেকে হাটকান্দা মাঝেরচর, নরসিংদীর মরিচা থেকে মানিকনগর এবং ঢাকার বুড়িগঙ্গা এলাকায় প্রতিনিয়ত নৌডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নৌ-পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
“প্রশাসন ওই জলদস্যু বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় নৌ শ্রমিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি মো. শাহ আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কর্ণফুলি-৫ নামে একটি কোস্টার লক্ষ্মীপুর-ভোলার বাত্তিরখাল এলাকায় পৌঁছুলে নৌযানটি ডাকাতদের কবলে পড়ে। দস্যুরা এসময় ওই কোস্টারে থাকা ১০ নাবিককে মারধর করে নগদ টাকা ও মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর থেকে ওই কোস্টারের সাত নাবিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এক মাস আগে হাজী আকবর আলী-৫ নামে আরেকটি কোস্টারের মাস্টারকে (চালক) দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে দস্যুরা। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। নদী পথে পাঁচ বছর ধরে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি করে আসছে দুর্বৃত্তরা।
এবিষয়ে প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি আরো বলেন, “আমরা বাধ্য হয়ে শনিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছি”।
দেশের নৌপথগুলোতে অন্তত ১০ হাজার নৌযান (কোস্টার, কার্গো ও ট্যাংকার) পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করে থাকে। এসব নৌযানে লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শাহ আলম জানান, এক মাসে শতাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটায় নৌযান শ্রমিকরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সরকার শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More