বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপিঠ ঐতিহ্যবাহী সরকারি পিসি কলেজের (আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র মহাবিদ্যালয়) প্রাক্তন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের পুনর্মিলনী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে পিসি কলেজ চত্বরে দিনভর এই পূনর্মিলনী উৎসবের আয়োজন করে প্রাক্তন শিক্ষক পরিবারের সন্তানবৃন্দ।
পূনর্মিলনীতে সারাদিনই আনন্দ উৎসবে মেতেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষকদের সন্তান, পুত্রবধূ ও নাতি নাতনিরা। খেলাধুলা, গান-গল্প, হাসি-ঠাট্টা ও স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে সন্ধা পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।
আশির দশক থেকে একুশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে যারা শিক্ষকতা করেছেন তাদের অধিকাংশই স্বপরিবারে অংশ নেয় এ উৎসব আয়োজনে।
১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের দীর্ঘ ৯৬ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের পুনর্মিলনী এটাই প্রথম বলে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানান।
পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নব্বইয়ের দশকে এই কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবর রহমান তার স্মৃতিচারণে বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের এই উদ্যোগ সত্যিই অসাধারন। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।’
আমি ভাবতেও পারিনি এদের সঙ্গে আবার নতুন করে দেখা হবে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার গুনগত মান ধরে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মীদের কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ অবসরে গেছেন, অনেকে এখনো কর্মরত আছেন। এভাবে আবার সবার সঙ্গে দেখা হবে ভাবিনি।’
এখানে এখন ১৪ বিষয়ে অনার্স ও ছয়টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি অভিভূত মুগ্ধ।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রাক্তন শিক্ষকের সন্তান মোস্তফা রসুল বাগেরহাট ইনেফো ডটকমকে বলেন, আমার বাবা গোলাম রসুল নব্বইয়ের দশকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাধে এই প্রতিষ্ঠানটি যেন আমার নাড়ির বন্ধনে আকড়ে ধরেছে।
বাবার সহযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে এই কলেজে পড়ালেখা করেছি। ছাত্রজীবনে এই কলেজের অনেক স্মৃতি আজও আমাকে কাছে টানে। এই সব বিষয় চিন্তা করে আামার ওই সময়ের সহপাঠিদের সঙ্গে আলোচনা করে আশির থেকে একুশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এই ঐতিহ্যবাহী সরকারী পিসি কলেজে যারা শিক্ষকতা করেছেন তাদের নিয়েই এই পূনর্মিলনী উৎসবের আয়োজন করি।
সারাদিন আমরা নেচে গেয়ে আনন্দ করে কাটিয়ে দিলাম।
কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেনের ছোট ছেলে জাকির হোসেন বাগেরহাট ইনেফো ডটকমকে বলেন, এটি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। এখান থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ সংসদ সদস্য হয়েছেন। তারা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখনো জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ। দিনদিন প্রতিষ্ঠানটি তার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের অবসরে যাওয়া শিক্ষাগুরুদের এক সাথে করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম যেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবসরে যাওয়া শিক্ষাগুরুদের নিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ নেয় সেজন্য সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন, অধ্যাপক মতিনুল হক, অধ্যাপক এনায়েত হোসেন তালুকদার, অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব, অধ্যাপক সুকণ্ঠ কুমার মন্ডল এবং পিসি কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র হীরা।
পরে সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে দিনব্যাপী ওই পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More