ইনজামামুল হক । বাগেরহাট ইনফো ডটকম

বাগেরহাট শহর থেকে আনুমানিক ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পুরাতন রূপসা-বাগেরহাট সড়কের যাত্রাপুর বাজার হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভেতরে বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত অযোধ্যা মঠ বা কোদলা মঠ।
স্থানীয় ভাবে “অযোধ্যার মঠ” নামেই বেশি পরিচিত মঠটি। তবে “কোদলা মঠ” নামও পরিচিতি আছে। কোদলা পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাম। বই-পুস্তক ও বিভিন্ন লেখা-লেখিতে অযোধ্যা নামটির পাসাপাসি কোদলা মঠ নমটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর তাদের বিভিন্ন নির্দেশিকায় একে কোদলা মঠ নামেই লেখে।
অযোধ্যা বা কোদলা মঠের বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর বাইরের অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ অলঙ্করণ।
বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় চতুষ্কোণ বিশিষ্ট ভিতের উপর নির্মিত হয়েছে অনিন্দ্যসুন্দর এ মঠটি। এর উচ্চতা আনুমানিক ১৮.২৯ মিটার। ইটের তৈরী মঠের প্রাচীর গুলির পুরুত্ব ৩.১৭ মিটার এবং ভেতরের বর্গাকার প্রত্যেক দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। দেয়ালের পালিশ করা লাল ইটগুলি অতি উচ্চমানের।

মঠে প্রবেশর মোট ৩টি পথ। ধারণা করা হয় দক্ষিন দিকের প্রবেশ পথটি ছিল মূল ফটক। বাকি প্রবেশপথ ২টি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে। প্রবেশ পথ গুলো মুলত ‘করবেল’ (পরপর ইট সাজিয়ে) পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে।
মঠের ভেতরের অংশে ১২/১৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা গুম্বুজ ফাঁকা তলদেশর আকারে উপরে উঠে গিয়ে শেষ হয়েছে। অনেকে ধারণা করে এর উপরেও মঠের অভ্যন্তরে শূন্য/ফাপা আছে।
কবে কার দ্বারা এ মঠটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা সম্পার্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে স্থাপত্যের গঠন অনুসারে ধারণা করা হয় মঠটি সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীর শেষ অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত। উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত যে ‘রেখা’ নমুনার মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি দেখা যায় তার প্রভাব এ মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়।
এটি কোন দেব-মন্দির নয়; সম্ভাবত: কোন মৃত মহাত্তার সমাধি -স্তম্ভ সরুপ মঠটি নির্মিত হয়েছিল।
মঠের দক্ষিণ দিকের কার্ণিসের নিচে দুই লাইনের ইষ্টকলিপি খুদিত ছিল। প্রথম লাইনের অক্ষর গুল পাঠোদ্ধার করার পূর্বেই প্রায় ভেঙে গেছে। লেখাটি ছিল-
“……………………শর্মনা।
উদ্দিশ্য তারকং(ব্রক্ষ্ম) [প্রশা] দোহাং বিনির্মিত: ।।“
এই খন্ডলিপির সঠিক অর্থ নিরুপণ করা যায় নি। তবে যতদূর পাঠোদ্ধার করা যায় তা থেকে অনুমিত হয় যে, তারকের (জনৈক ব্রক্ষণ কর্তিক) প্রাসাদ বা অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে এ মঠ খুব সম্ভবত একজন ব্রাক্ষ্মণ (শর্মনা) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।
মঠের নির্মান নিয়ে সবচেয়ে স্বীকৃত বারভূইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য উদ্দগে তাঁর গুরু (সভাপন্ডিত) ‘‘অবিলম্ব সরস্বতীর’’ স্মৃতিস্তম্ভ রূপে মঠটি নির্মিত হয়।
এই অবিলম্ব সরস্বতী ছিলেন একজন অসাধারণ পন্ডিত। তিনি মুখে মুখে দ্রুত বড় বড় কবিতা রচনা করতে পারতেন বলে তার নাম হয় ‘অবিলম্ব সরস্বতী’। তিনি শুধু কবি নন- তিনি ছিলেন একজন পরম ভক্ত ও সাধক।
অযোধ্য মঠ নামে পরিচিত মঠটি বাগেরহাটে রাজা প্রতাপাদিত্যএর অন্যতম স্মৃতি।
পোড়ামাটির অলংকরণে নির্মিত মধ্যযুগীয় এ মন্দিরটি বাংলার স্থাপত্য শিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। মঠটি তৎকালীন বাংলার সমৃদ্ধ হিন্দু ঐতিহ্যের পাশাপশি মধ্যযুগে বাংলার মুসলমান শাসকদের পরমসহিষ্ণুতার নিদর্শণ বহন করে।
Support Context:
- যশোর খুলনার ইতিহাস- সতীশ চন্দ্র মিত্র
- বিবর্তিত বাগেরহাট- মোহম্মাদ রেজাওয়ানউল হক
- বাগেরহাটের ইতিহাস- ড. শেখ গউস মিয়া
- জেলা তথ্য বাতায়ন
আরো ছবি-







Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More