দীর্ঘ তিন যুগ মন দেওয়া-নেওয়া। এর মাঝে শুধুই অপেক্ষা। অবশেষে পরিনতি ঘটলো ৩৬ বছর ধরে চলা প্রেমের।
সকল বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসল এই প্রেমিকযুগল।
এমনই সাড়া জাগানো প্রেমের পরিনতি দেখতে (বিয়ে) অসংখ্য উৎসুক লোকজন ভিড় জমায় কনের বাড়ি। অনেকে এই প্রেমিকযুগলকে আখ্যা দিয়েছেন এ যুগের রজকিনী-চন্ডীদাস বলে।
দীর্ঘ তিন যুগ প্রেমের পর এ বিয়ের ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খড়মখালী গ্রামে।
হবুবর শুধাংশু বৈরাগী জানান, স্কুলজীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মৃত লোকনাথ বৈরাগীর ছেলে শুধাংশু বৈরাগীর সাথে পার্শ্ববর্তী খড়মখালী গ্রামের মৃত নিরোধ রায়ের কন্যা নিভা রাণী রায়ের। পরবর্তীতে কলেজে পড়তে এসে তাদের প্রেমের সম্পর্ক আরো পূর্ণতা লাভ করে। এভাবে চলতে চলেতে একে অপরের মন দেওয়া-নেওয়ার মাঝে পেরিয়ে যায় ৩৬ টি বছর।
শিক্ষাজীবন শেষ করে দু’জনে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলেও নানা সমস্যায় সেটি আটকে যায়। বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলেও নানা মতবিরোধ থাকার ফলে তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। আশায় বুক বেঁধে থাকেন দুজনে। এভাবে কেটে যায় প্রেমের প্রায় ৩৬টি বছর।
শুধাংশু বৈরাগী বর্তমানে ৫৫ বছরে পা দিয়েছেন। এলাকায় স্বঘোষিত চিরকুমার সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার পরিচয় রয়েছে। কয়েকবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি।
প্রেমিকা নিভা রাণীর বয়স এখন ৫০-এর কোঠায়। তিনি বর্তমানে একটি এনজিও সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এলাকাবাসী জানান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের পর থেকে বয়সের কথা না ভেবে এই প্রেমিক জুটির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকার সচেতন মহলের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চলে দুই পরিবারকে বিয়েতে রাজি করানোর। অবশেষে দুই পক্ষের কাছ থেকে সাড়া মেলে।
দুই পরিবারের সম্মতিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ১১ টায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী অগ্নি সাক্ষী রেখে মালা বদলের মাধ্যমে প্রেমিকা নিভার বাড়িতে বসে ধুমধামের সঙ্গে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এত দিনের সব বাধাবিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তাদের দুজনার বিয়ের মাধ্যমে জয় হয় প্রেমের।
এ সময় বিয়ে দেখতে দলে দলে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষরা ছুটে আসেন। চারদিকে হই চই পড়ে যায়। বিয়েবাড়িতে লোক দাঁড়ানোর তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিল না। কনের বাড়িতে রাত জেগে বিয়ে দেখেন আগতরা। পাশাপাশি এ বিয়েকে ঘিরে মিষ্টিমুখ ও রং মাখামাখি চলে রাতভর।
এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র কয়েক দিন ধরে চলছে এ বিয়ের আলোচনা- এমনটি জানালেন কনের বাড়ির পাশের চা বিক্রেতা মো. আবু হানিফ। এলাকার শ্রেষ্ঠ প্রেমিক জুটি বলেও তারা সুখ্যাতি পেয়েছেন বলেও জানালেন অনেকে। প্রেমিক শুধাংশুর নিকট আত্মীয় দেবাশীষ মন্ডল বলেন, ‘লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-চন্ডীসের মতো তাদের প্রেমকাহিনি এখন এলাকার লোকজনের মুখে মুখে।
এমন প্রেমের বিয়ে আজকাল খুব একটা দেখা যায় না। শুধাংশু সময়মতো বিয়ে করলে আজ তিনি নাতি-নাতনির মুখ দেখতেন। এত দিন ধরে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে, এমন নজির খুব কম রয়েছে। রজকিনী-চন্ডীদাসের প্রেমকাহিনির চেয়ে তাদের এ প্রেম কোনো অংশে কম নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
শুধাংশু বৈরাগী জানান, তাদের প্রেম সার্থক হয়েছে। জয় হয়েছে ভালোবাসার। নববধূকে নিয়ে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটাতে চান। সত্যিকারের প্রেম কখনো বিফলে যায় না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রেমিক-প্রেমিকারা যেন কেউ ভুল করে কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয়, এ ব্যাপারেও তিনি পরামর্শ দেন। নবদম্পতি সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More