• মাসুমা রুনা
ভালোবাসা তো কত রকমের হয়! আমারও হয়েছে এই বাগেরহাট শহরের সাথে।
পুরো শহরটাকে মনে হয় এ তো আমার! আহারে সেই রাস্তাগুলো, আহারে সেই গাছগুলো! সন্ধ্যেবেলা আবছা আলোয় হাটতে হাটতে কথা বলি….
কার সাথে? যুগ যুগ ধরে চেনা চেনা বাড়িগুলোর ক্ষয়ে যাওয়া ইট অথবা কাপাকাপা হাতে স্পর্শ করি। সে দেয়ালে, যার মালিক আমি নই কিন্তু বহু বছর ধরে তার পাশ থেকেই তো চলে গেছি!
হাত বুলিয়ে জানতে ইচ্ছে হয় ‘‘কেমন আছো??’’ এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কি কি দেখলে বলতো আমায়?!
দেয়ালের কি আর ভাষা থাকে? তবু মনে হয় এই যে আমি পরম মমতায় তাকে ছুঁয়ে দিয়েছি ভালো লেগেছে তার!
ইদানীং হাটার সময় কত বাড়ির গেইটে যে দেখলাম মাধবিলতার ঝোপঝাড়!
কি অতুলনীয় সুন্দর! আর কি ব্যাকুল করা গন্ধ!!! মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাই!
এ শহরে বেশ কিছু শুনশান রাস্তা আছে। চলতে চলতে মনে হয় এ পাড়ায় ঘুমপরী এসে যাদুরকাঠি ছুঁইয়ে সব্বাইকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সেই যে কবে চলে গেছে আর আসেনি ফিরে! এমন না যে সে রাস্তায় কোন মানুষ হাটে না, এমনও না হঠাৎ এক রিকশা টুংটাং বেল বাজিয়ে পাশ থেকে চলে গেল না।
তবুও কেমন জানি ঘুমঘুম ভাব। “কেউ নাই, কেউ নাই” হাহাকার। কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে যায় শুধু মুনিগঞ্জ থেকে উচু পোল অবধি!
আর পি টি আই স্কুলের রাস্তা টা! কি বলবো আর! ডান দিকের ঐ বৃটিশ আমলের ঘরবাড়ী! একতলা সেই বাড়ীগুলো দেখলে মনেহয় মেপে মেপে কথা বলে আর চোখবুজে সেতার শুনে! কোনদিন কাউকে দেখিনি এসব বাড়ীতে ঢুকতে অথবা বেরুতে!
ইচ্ছে করে তাকে কাছে গিয়ে বলি, আমাকে চিনেছেন?
পাশের যে গার্লস স্কুল ওখানে পড়তাম আমি। আর আমাদের স্কুলের পুকুরপাড়ের তেতুল গাছ থেকে বান্ধবিরা মিলে তেতুল খেয়েছি কত! আপনার ঠিক পিছনের দেয়াল টপকালেই তো আমাদের স্কুলের পুকুর টা!
জড়বস্তু র সাথে মনে মনে কথা বলাটা এই শহরটাই শিখিয়েছে আমায়। আমি ভালোবাসি এ শহরের আলাদা আলাদা গলির আলাদা আলাদা ভাব কে!
আর ফুলের গন্ধে গাছের গন্ধে চিনে চিনে বাড়ি ফিরি।
এটা এমন এক ভালোবাসা যে কখনো ছেড়ে যায় না। শুধু একই ভাবে একই জায়গায় থেকে যায় অন্যরকম এক সস্তি!
লেখক: কবি, লেখক ও ফটোগ্রাফার।
এসআইএইচ/বিআই/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More