আইন বা নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই সুন্দরবনে চলছে অবৈধভাবে চলছে হাঙ্গর শিকারের রমরমা বানিজ্য। সুন্দরবনের দুবলার চরে জেলেদের দিয়ে এখন অবাধে চলছে এই হাঙ্গর বাণিজ্য।
প্রশাসনের নজর দারির অভাব আর উদাসীনতার কারণে এভাবে হাঙ্গর শিকারের ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ধ্বংসের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
সুন্দরবনের সাথে সম্পৃক্ত জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। তাই হাঙ্গর শিকার লাভজনক হওয়ায় দিন দিন জেলেরা এদিকে ঝুঁকছেন। তবে প্রশাসন বলছে, এসব বিষয় নজরে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাঙ্গর গভীর সমুদ্রে দল বেঁধে থাকে। জেলেরা এক ধরনের বড়শি এবং অপেক্ষাকৃত মোটা সুতার জাল সমুদ্রে ফেলে হাঙ্গর শিকার করে। পরে তা দুবলার বিভিন্ন চরে এনে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে রপ্তানি করা হয়।
দুবলার চরের একটি শুঁটকি পল্লীতে কর্মরত শ্রমিক মিজানুর রহমান বাগেরহাট ইনফোকে জানায়, শীত মওসুমের শুরুতে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে বঙ্গোপসাগর থেকে হাঙ্গর শিকার শুরু হয়। পরে তা দুবলার চরে এনে শুঁটকি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। এ প্রক্রিয়া চলে মার্চ মাস পর্যন্ত।
হাঙ্গর শিকার নিষিদ্ধ হলেও বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সবচেয়ে বেশি হাঙ্গরের শুঁটকি করা হচ্ছে দুবলার চরের আলোরকোল ও মেহেরআলীর চরে।
দুবলার চরে হাঙ্গর শিকার এবং তা শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হচ্ছে এমন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “এগুলো (হাঙ্গর) এমনিতেই জালে ধরা পড়ে। পরিকল্পনা করে ধরা হয় না।”
এদিকে দুবলার চরের শুঁটকি ব্যাপারি আবুল বাসার জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার জালে কম হাঙ্গর ধরা পড়েছে।
তিনি জানান, ছোট হাঙ্গরের ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় তারা কিনতে পারেন। বড় হাঙ্গর মণ হিসেবে তারা কিনে থাকেন। প্রতি মণ বড় হাঙ্গর ৮-৯ হাজার টাকা দরে এখন বিক্রি হচ্ছে।
হাঙ্গরের শুঁটকি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আবুল বাসার বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “কেনার পর হাঙ্গরগুলো কেটে পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। তার পর পানিতে ধুয়ে মাচায় টাঙিয়ে দেওয়ার পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে তা শুঁটকিতে পরিণত হয়।
এ পর্যন্ত দুটি চালান তিনি বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি।
বাসার আরো জানান, প্রথমে দুবলার চর থেকে হাঙ্গরের শুঁটকি তৈরি করে দেশের ভিতরে সৈয়দপুর ও চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে চড়া দামে ভিয়েতনাম, কোরিয়া, জাপান, চীনে প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়।
অন্যান্য শুঁটকি ব্যাপারিদের বরাত দিয়ে বাসার বলেন, শুধু দুবলায় নয় সারা বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা কুয়াকাটা, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হাঙ্গরের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। সাধারণত উপকূলের মাছের আড়তগুলোতে সকালে খোলাবাজারে বিক্রি হয় হাঙ্গর। এরপর দিনভর চলে শুঁটকি পল্লীতে পৌঁছে কেটে ধুয়ে চলে মাচনে শুকাতে দেওয়ার কাজ।
এক একটি শুঁটকি খামারে ৭-৮ জন করে শ্রমিক থাকে বলে জানান বাসার।
মংলার মাছ ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াছ হোসেন জানান, সাগর থেকে হাঙ্গর শিকারের পর ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তা জীবিত থাকে। তবে ছোট হাঙ্গর ২-৩ ঘণ্টার বেশি জীবিত থাকে না। সব মিলিয়ে হাঙ্গর শিকারের পর গভীর সমুদ্র থেকে ৪-৫ ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে উপকূলে আসার পরও তা পচে যাওয়ার ভয় থাকে না। ফলে ট্রলারে বরফ মজুদ না থাকলেও অথবা কোনো প্রকার বরফ ছাড়াই ২/৩ দিন পর্যন্ত রাখা সম্ভব। যা গভীর সমুদ্রে অন্যান্য মাছ শিকার করে বরফের বিকল্প কিছু ভাবা অসম্ভব।
ইলিশ ও অন্যান্য মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ধরা না পড়ায় জেলেরা ক্রমশ হাঙ্গর শিকারে ঝুঁকছেন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এদিকে এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেভ দ্য সুন্দরবন-এর চেয়ারম্যার ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “সুন্দরবনে জেলেদের যে মাছ ধরার পাশ (বিএলসি) দেওয়া হয় তাতে হাঙ্গর ধরা নিষিদ্ধ। এ কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকলেও কেন তা মানা হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমীর হুসাইন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “সুন্দরবনের অভ্যান্তরে হাঙ্গর শিকার নিষিদ্ধ।”
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে দুবলার চরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নিয়ে একটি মিটিং করা হয়েছে। এসময় জেলেদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, যদি অন্য মাছের সাথে জালে হাঙ্গর আটকা পড়ে তারা যেন তা ছেড়ে দেন।
এর পরেও কেউ যদি হাঙ্গর শিকারের সাথে জড়িত থাকে তার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আতিকুর রহমান ভুঁইয়া বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “সুন্দরবনে হাঙ্গর শিকার হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। তবে এধরনের অপরাধে মৎস্য বিভাগ সাহায্য চাইলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।”
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More