৭ ডিসেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী বাঘা যতিনের ১৩৪ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৭৯ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির গড়াই নদীর তীরে কয়া গ্রামে মাতুল তলায় জন্মলাভ করেন বিপ্লবী বাঘা যতিন।
তাঁর প্রকৃত নাম জ্যোতিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। পিতা উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মাতা শরৎশশী। পৈত্রিক বাড়িছিল ঝিনাইদহ জেলায়। মাত্র ৫ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হয়। এর পর তার মা তাদের যান বাবার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। মা ছিলেন স্বভাবকবি। যতীনের বড় মামা বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরদের শিলাইদহের জমিদারীর আইনজীবি।
যতীন ছেলেবেলা থেকেই শারিরীক শক্তিতে অন্যতম ছিলেন। গ্রাম হতে দুই কিলোমিটার দূরে রাধারপাড়া মাঠের আখ ক্ষেতে ছুরি দিয়ে বাঘ হত্যা করে নিজেকে রক্ষা করায় তার নাম হয়েছিল বাঘা যতিন।
শিক্ষাজীবন-
কয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাই স্কুল হতে ১৮৯৮ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজে। পড়াশুনার পাশাপাশি টাইপরাইরের কাজের প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে সম্পৃক্ত হন কলকাতা সেন্টাল কলেজের বিপ্লবী গুপ্ত সমিতির কার্যক্রমের। ইস্তফা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠে। এর পর যুগান্তর দলের নেতা হয়ে তিনি দলকে আরও সুসংগঠিত করে বিপ্লবী অনুশীলন দলের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলেন।
বিপ্লবী জীবন-
কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজের পাশেই বাস করতেন স্বামী বিবেকানন্দ। দেশে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবে স্বামী বিবেকানন্দের আহব্বানে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হন।
কর্মজীবন-
১৮৯৯ সালে মফ:ফরপুরে ব্যারিস্টার কেনেডীর সেক্রেটারী হিসাবে কাজে যোগ দেন। কেনেডী ভারতের বিভিন্ন গবেষনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কেনেডির উৎসাহে যতীন এলাকার তরুনদের ফুটবল ক্লাব গড়ে তোলেন। কেনেডি দুর্ভাগ্যক্রমে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর ছোড়া বোমায় মারা যান। কেনেডির সুপারিশে বাংলা সরকারের অর্থসচিব হেনরি হুইলারের স্টেনোগ্রাফার হিসাবে নিয়োগ পান।
১৯০৩ সালে শ্রী অরবিন্দের সাথে পরিচিত হয়ে বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯০৬ সালে বারীন ঘোষের সঙ্গে বোমা তৈরীর কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৭ সালের হুইলারের সাথে দার্জিলিংয়ে বদলি হলেন। ১৯০৮ সালে চারজন সামরিক অফিসারের সাথে শিলিগুড়ি স্টেশনে মারপিট হয় যা নিয়ে মামলা হয়। ১৯১০ সালের ২৭ জানুয়ারি হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় যতীনকে গ্রেপ্তার করা হল। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঝিনাইদহে ঠিকাদারের ব্যবসা শুরু করেন যশোর ঝিনাইদহ রেলপথ।
যতীন বালেশ্বরে পলায়নে থাকা অবস্থায় সারা দেশে শুরু সন্ধান যতীন জানালেন “আর পালানো নয়। যুদ্ধ করে আমরা মরব। তাতেই দেশ জাগবে”।
উড়িষ্যার মহাফেজকানার রক্ষিত নথিপত্র উদ্ধার করতে গিয়ে যতীন তার সঙ্গী সহ সশস্ত্র পুলিশের মুখোমুখি হলেন। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সূর্যাস্তের সংগে শেষ হল এই যুদ্ধের। যুদ্ধে আহত যতীন বালেশ্বর সরকারী হাসপাতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন পরেরদিন।
হাসপাতালে রক্তবমির মধ্যে হাসতে হাসতে বলেছিলেন “এত রক্ত ছিল শরীরে? ভাগ্যক্রমে, প্রতিটি বিন্দু অর্পন করে গেলাম দেশমাতার চরণে”
ব্যক্তিগত জীবনে– মৃত্যুর পূর্বে তার মা-এর নির্ধারীত ইন্দুবালা দেবীকে বিয়ে করেন। একে একে অতীন্দ্র, আশালতা, তেজেন্দ্র এবং বীরেন্দ্র ৪ টি সন্তানের পিতা হন তিনি।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More