কোন রকাম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জলসীমা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পথ ভুলে বা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলার বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। আবার টহল বোটের ধাওয়া খেয়ে তারা আবার ফিরেও যাচ্ছে।
শুক্রবার বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে দুটি ট্রলারসহ ২৯ ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। পরে তাদেরকে মংলা থানায় হস্থান্তর করা হয়েছে বলে থানা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
মংলা শেহালাবুনিয়ার বাসিন্দা ও বঙ্গোপসাগরের জেলে লাল মিয়া বাগেরহাট ইনফোকে অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে মাছের আকাল চলছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে তারা সামান্য মাছ নিয়ে ফিরছেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেশের জলসীমায় ভিনদেশী জেলেদের অনুপ্রবেশ, কারেন্ট জাল ব্যবহার এবং মাছের পোনা নিধনকে দায়ী করেছেন তিনি।
সুন্দরবনের দুবলা চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল বাসার বাগেরহাট ইনফোকে জানান, দুবলারচর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে দেশের উপকূলীয় জেলেরা বঙ্গোপসাগরের ৮ ও ১০নং বয়ায় জাল পেতে মাছ শিকার করে। সাগরের এ স্থানে জাল পাতা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মাছ বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ভারত ও থাইল্যান্ডের জেলেরা নৌসীমানা লংঘন করে প্রায়ই এ এলাকার জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
সাগরে অধিকাংশ সময়ই ভারতীয় জেলেদের উৎপাত বেশি থাকে উল্ল্যেখ করে মংলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জেলে হেমায়েত হাওলাদারবাগেরহাট ইনফোকে জানান, ভারতীয় জেলেরা কারেন্ট জালসহ ৫ ধরণের অত্যাধুনিক জাল ব্যবহার করে। পাশাপাশি মাছের পোনাও ধরে। তাদের কাছে রয়েছে জিপিএস (বিশেষ সংকেত) নামক বিশেষ ধরণের যন্ত্র। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় জেলেরা যে পথ দিয়ে সাগরে আসে, আবার সে পথ দিয়েই ফিরে যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় জেলেরা মোবাইল ফোন, অত্যাধুনিক ওয়্যারলেস সেটসহ বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগের মাধ্যমও ব্যবহার করে। এতে করে তাদের কোন ট্রলার সাগরে আক্রান্ত হলে দ্রুত ওই দেশের সমুদ্রে নিয়োজিত বাহিনীসহ অন্যদের কাছে খবর পৌঁছে যায়। ফলে তারা খুব সহজেই বাংলাদেশ সীমানা থেকে মাছ ধরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের জেলেদের এ ধরণের কোন যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগই নেই।
সুন্দরবনের মৎস্য জীবি জাবেদ হোসেন বাগেরহাট ইনফোকে জানান, বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় ফিসিং ট্রলার দেশীয় সমুদ্রসীমার প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে মাছ ধরছে। বাংলাদেশের জেলেরা সেখানে গেলে তারা হামলা চালাচ্ছে।
মংলার মৎস্য ব্যবসায়ী মোস্তফা বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরে এমনটা হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের অত্যাচার বেড়ে গেছে। কয়েকশ’ ট্রলার একসঙ্গে ঢুকে মাছ ধরছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলেদের দুর্দিন নেমে আসবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, প্রায় সব সময়ই ভারত ও থাইল্যান্ডের জেলেরা দেশীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। ফলে আমাদের সমুদ্র সম্পদ আহরণ কমে যাচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে মংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফোকে জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী শুক্রবার দুটি ট্রলারসহ আটক ২৯ ভারতীয় জেলেকে মংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তাদের (ভারতীয় জেলে) বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ও মাছ চুরির অভিযোগ এনে নৌ বাহিনীর পেটি অফিসার এম এ জাকির বাদি হয়ে দুটি মামলা করেছেন। ভারতীয় জেলেদের আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এমএএফ/আই হক-নিউজ ডেস্ক/বিআই
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More