• আফিয়া জান্নাত অনন্যা
মঙ্গলবার আমি ও আমার এক বান্ধবী মুনিগঞ্জ ব্রিজে গিয়েছিলাম। বাগেরহাট শহরের বাসিন্দা হলেও ব্রিজের ওপার কোন এলাকা, তা জানতাম না। মুনিগঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে দেখি সেখানে কয়েক জন গাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছেন। বুঝলাম এটা টোল প্লাজা।
আমি তাদের কাছে প্রশ্ন করি ‘এই জায়গাটার নাম কি?’
তারা জবাব দেয়, ‘জাহান্নাম’।
একজন বলে ওঠেন, ‘যা, ওদের বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়!’
-এদের কি বাড়ি আছে? না মনে হয়!
ইত্যাদি ইত্যাদি অশ্রাব্য কথা!
আমি জানতাম না টোল-এ বখাটেদের এমন উৎপাত। এলাকা টা নির্জন ছিলো! নিজের জায়গা থেকে যে প্রতিবাদ করব তারও উপায় ছিলো না। ক্ষোভ আর বিতৃষ্ণা নিয়ে ফিরে আসি সেখান থেকে।
প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ক্ষোভটাও নিজের ভেতর চেপে রাখতে পারছিলাম না।
মাথায় আসে ‘সিটিজেন ভয়েসে’র কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাসিন্দা হিসেবে আমিও একজন সদস্য Citizen’s Voice of Bagerhat গ্রুপের। ফেসবুকের এই গ্রুপে সচেতন সাধারণ নাগরিক ছাড়াও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লিখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাবস্থা নেন তারা। গ্রুপে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে নাজিম উদ্দিন স্যার। এলাকার কোন অন্যায়, অপকর্মের অভিযোগ এই গ্রুপে জানালে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে-তার বিচার করা হয়!
আমিও এই গ্রুপে অভিযোগ করলাম।
বুধবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তারা। একটি অভিযান পরিচালনা করলেন। আগের দিনের সব ক’জন ওখানে ছিলো না, তবে টোলে একজনকে পাওয়া গেলো।
তাকে আটক করে নিয়ে আসা হলো। আমি সাক্ষী দেবার পর, তার শাস্তি হলো। ছয় মাসের জেল।
প্রতিদিন ইভটিজিংসহ এমন অনেক অন্যায়ের স্বীকার হয় মেয়েরা। কিন্তু অধিকাংশই সাহস করে সামনে আসতে চায় না। প্রতিবাদ করে না। সহ্য করে যায় মুখ বুজে।
সকল অভিভাবকদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দিন। নিজের মেয়ের আতঙ্ক না বাড়িয়ে তার সমস্যার কথা শুনুন। তার পাশে দাড়ান, তাকে সাহায্য করুন।
অনেক নিরীহ মেয়েরা, ভয়ে আতঙ্কে অনেক কিছুই মেনে নেয়। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আপনার একটি পদক্ষেপ, কয়টি জীবনকে বাঁচাতে পারে। উত্যক্তকারীদের বাজে কথা, কাজ মেনে নেওয়া মানে তাদের উৎসাহ দেয়া। অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়া।
আপনার মেয়েটি যেন এমন অন্যায়ের স্বীকার না হয়। সেই বিষয়টি খেয়াল রাখার সঙ্গে আপনার সন্তানও যেন এমন অপরাধে না জড়ায় তার দিকে দৃষ্টি রাখুন।
সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে, আর কেউ কারও সঙ্গে এমন আচরন করতে সাহস পাবেনা। তাই ‘যথাযথ’ ব্যক্তির খোঁজ রাখুন। সমস্যা চাপিয়ে রাখলে তার আরও প্রকট হয়। ‘যথা’ স্থানে অভিযোগ করতে পারাটাও একটা ভালো পদক্ষেপ।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের ডিসি স্যার, এডিএম স্যার এবং বিশেষ করে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘নাজিম উদ্দীন’ স্যার এই এলাকাকে স্বচ্ছ ও সুন্দর করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
বাগেরহাটের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার জানানোর জন্য একটি অনন্য প্লাটফর্ম Citizen’s Voice of Bagerhat ! ফেসবুকের মাধ্যমে সমস্যা তুলে ধারা ও সমাধানের একটি অসাধারণ উদ্যোগ।
সবাই মিলে প্রশাসনিক এই মহৎ উদ্যোগকে এগিয়ে নেই, পাশে দাড়াই। নিজের জন্য, আমাদের জন্য, বাগেরহাটের নির্মল ভবিষ্যতের জন্য!!
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More