বাগেরহাটের শরণখোলায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ৩৬ জন অ-মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তভূক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। তালিকা থেকে ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ ও ভাতা বন্ধের দাবীতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর কাছে আবেদন করেছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি গেজেট এবং মুক্তিবার্তায় (লাল বই) নাম নেই একমন কি কোথায় এবং কোন কমান্ডের অধিনে যুদ্ধ করেছেন তারও কোনো তথ্য প্রমান এমন কয়েক জনকে অন্তভূক্ত করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। অন্তভূক্তদের প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সময়িক সনদ পত্রও নেই। অথচ এক বছরের সম্মানি ভাতাও বরাদ্দ হয়েছে তাদের নামে।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সম্প্রতি ওই ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা উত্তোলনের জন্য সোনালী ব্যাংকের রায়েন্দা বাজার শাখায় হিসাব (একাউন্ট) খুলতে গেলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। নামধারী এসব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আ. গফ্ফার খলিফাসহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন তারা।
তাদের দাবী, ওই ৩৬ জনের মধ্যে অধিকাংশই বর্তমানে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৭১সালে এদের অনেকেই ছিল ৭-৮ বছরের শিশু। এসব যেনেও কোনো প্রকার যাচাইবছাই না করেই প্রশাসনের সহায়তায় অনৈতিক এ কজটি করা হয়েছে। আর এর জন্য তাদের অভিযোগের তীর শরণখোলার সাবেক ইউএনও কেএম মামুন উজ্জামান ও সদস্য সচিব সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান শিমুলের বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত কয়েক ভূয়া মু্ক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ত সনদসহ সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত ও ভাতা করিয়ে দিতে কোন প্রকার উৎকোচ দিতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তারা জানান, ইউএনও’র প্রতিষ্ঠিত আইডিয়াল ইনষ্টিটিউট স্কুলে ভাতার অর্থ অনুদান হিসাবে তিনি দাবি করেছিলেন।
তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ খানের দাবী, মুক্তিযোদ্ধা ও সম্মানী ভাতা করিয়ে দেয়ার কথা বলে ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের কাছ থেকেই সাবেক ইউএনও মামুন উজ্জামান ১০-১৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়েছেন। তাছাড়া এক বছরের ভাতার টাকাও তার আইডিয়াল ইনষ্টিটিউট স্কুলে অনুদান হিসেবে দেয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে, যাচাইবাছাই না করেই ভূঁয়া লোককেরা কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইউসুফ আলী সিকদার।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নবনির্বাচিত কমান্ডার এম এ খালেক খান ও ডেপুটি কমান্ডার হেমায়েত উদ্দিন বাদশার ও দাবি তালিকাভূক্ত ৩৬ জনের কেউই মুক্তিযোদ্ধা নয়। এরা কোথায় যুদ্ধ করেছে এবং ডাটাবেইজে কিভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে তাও জানা নেই। এজন্য তাদের ভাতা বন্ধেরও দাবী করেন তিনি।
তারা জানান, বর্তমানে শরণখোলা উপজেলায় ৪৭৭ জন সরকারি গেজেটভূক্ত ও ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা আছে। এ তালিকার বাইরে হয়তো দু-একজন থাকতে পারে। কিন্তু ৩৬জন বাদ পড়াটা অবিশ্বাস্য।
এব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান শিমূল জানান, শুধুমাত্র আবেদন পত্র গ্রহন করা ও যাচাইবাছাই কমিটির সভায় সেগুলো উপস্থাপন করার দায়িত্ব তার। ওই সভায় অনুমোদিত হলে পরবর্তীতে আবেদন পত্রগুলো জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
আর অপর অভিযুক্ত সাবেক ইউএনও ও তৎকালীন যাচাইবাছাই কমিটির সভাপতি কে.এম মামুন উজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, কে ভূঁয়া আর কে সঠিক সেটা আমার জানার কথা নয়। যাচাইবাছাই কমিটির সভায় যুদ্ধকালীন বেশ কয়েকন কামন্ডার উপস্থিত ছিলেন। তারাই তাদেরকে সনাক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে শরণখোলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. হালিম জানান, আগামী ৯ জুলাই পূনরায় যাচাইবাছাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় কেউ যদি ভূঁয়া প্রমানিত হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More