বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দুই সহোদর শিশু হত্যার অভিযোগে আটক বাচ্চু মৃধা (৪০) পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু স্বীকার করেছে, ধর্ষণের দৃশ্য দেখে ফেলা এবং তার প্রতিবাদ করায় শিশু দুটিকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে সে।
এদিকে, শনিবার সকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে নিহত ওই দুই শিশুর লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে খুলনার রূপসা উপজেলা সংলগ্ন বাগেরহাটের মংলা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বাচ্চুকে আটক করে। বাচ্চু মৃধা উপজেলার পায়লাতলা গ্রামের মৃত বারেক মৃধার ছেলে।
শুক্রবার রাতে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান মোরেলগঞ্জ থানায় পৌছে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও মংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনামূল হক মিঠু এবং মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম খানকে সঙ্গে নিয়ে বাচ্চু মৃধাকে প্রায় ৩ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
বাচ্চু জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ওই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে।
এব্যাপারে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে প্রতিবেশি বাচ্চু মৃধা লোকমান হোসেনের অনুপোস্থিতিতে লোকমানের বাড়িতে আসেন। এসময় বাড়িতে লোকমানের (ধর্ষিতা মা রওশন আরা বেগম) মা ও তার দুই শিশু সন্তান মীরাজুল ও রিয়াজুলকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাচ্চু ওই বাড়িতে এসে লোকমানের মা রওশন আরাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। পরে তিনি ঘরে ঢুকে রওশন আরাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো জুস খেতে দেয়।
এই জুস খাওয়ার পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে বাচ্চু তাকে ধর্ষণ করেন। এসময় তাদের পাশে ঘুমিয়ে থাকা লোকমানের দুই ছেলে ঘুম থেকে জেগে সেই দৃশ্য দেখে ফেলে। তারা দু’জনে এই ঘটনা তার বাবাকে বলে দেবে বললে বাচ্চু ক্ষিপ্ত হয়ে দু’জনকে ঘর থেকে ধরে বাইরে নিয়ে পাশের একটি ডোবার পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে এবং লাশ দুটি চিংড়ি ঘেরে ফেলে দেন বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন।
এদিকে, থানা সূত্র জানায়, এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতদের বাবা হাওলাদার লোকমান হোসেন বাবু বাদী হয়ে বাচ্চু মৃধাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে মোরেলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরের পর মোরেলগঞ্জ উপজেলার পায়লাতলা গ্রামের একটি চিংড়িঘের ও ডোবা থেকে ওই এলকার হাওলাদার লোকমান হোসেনের ছেলে মীরাজুল হাওলাদার (১১) এবং রিয়াজুল হাওলাদার (০৮) নামে দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম খান শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন,নিহতদের পরিবার প্রথম থেকেই বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শিশু হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ওই আসামীকে তারা আটক করেছে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া বাচ্চু নামে ওই ব্যক্তি শিশু দুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তিনি একাই শিশু দুটিকে হত্যা করেন এবং এর সঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা নেই বলেও পুলিশের কাছে দাবি করে বাচ্চু।
ওসি আরো বলেন, বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খানের নের্তৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে বেশকিছুদিন ধরে বনিবনা না হওয়ায় (শারীরিক সম্পর্ক) সে এই ধরনের জগন্য কাজ (ধর্ষণ ও হত্যা) করেছেন। শনিবারও তাকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আটক বাচ্চুকে রোববার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে আদালতে নেয়া হবে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More