কোন রুপ অযুহাত না দেখিয়ে সুন্দরবনকে বাঁচানোর চেষ্টায় ঘরের থালা-বাটি, বলতি আর চটের বস্তা নিয়ে বনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া কালো তেল মুক্ত করতে নেমে পড়েছেন স্থানীয়রা।
প্রথমে রাসায়নিক (অয়েল স্পিল ডিসপারসেন্ট) ছিটিয়ে তেল অপসারণের কথা থাকলেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় তা স্থগিত রাখা হয়।
পরে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়া জ্বালানি তেল সরাতে স্থানীয় অধিবাসী এবং জেলেদের সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে, স্থানীয়দের মাধ্যমে তেল তোলার জন্য কর্তিপক্ষ তাদের ফোম, স্পঞ্জ বা অন্য কোন উপকরণ সর্বাহ করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার দুপুরে সুন্দরবনের দূর্ঘটনাস্থল শ্যালা নদী থেকে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য কল্লোল মুস্তফা মুঠোফোনে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও বাহিনীর মতো কোন রুপ অযুহাত না দেখিয়েই বন সংলগ্ন স্থানীয়রা নিজেদের হাত পা সম্বল করে থালা বাটি নিয়ে নেমে পড়েছেন সুন্দরবনের নদী-খালে। থিকথিকে কালো তেল মুক্ত করতে স্থানীয় জনগনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
কিন্তু এভাবে কি বিশাল সুন্দরবন এলাকার নদী, খাল, বনভুমি কি দূষণমুক্ত করা যাবে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন এ প্রক্রিয়ায় কবে সুন্দরবন কত দিনে দুষন মুক্ত হবে?
পলিইউরেথিন জাতীয় ফোম ব্যাবহার করে পানি থেকে তেল শোষনের বিষয়টি সঠিক মনে করলেও এতো বিশাল এলাকার তেল দূষন মুক্ত করার জন্য এটা মূল উপায় হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, এমন এলাকায় তেল শোষণকারি সরবেন্ট মেটেরিয়াল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া কেমিক্যাল ডিসপারসেন্ট, ভ্যাকুয়ামিং ইত্যাদি নানা উপায়ে তেল শোষণ করা যায়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং বিভিন্ন স্পিলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।
কিন্তু সরকার এসব কোন কিছুই করছেনা, স্রেফ সাধারন জনগনের উৎসাহ উদ্দীপনাকে ব্যবহার করছে দেশের মানুষের মধ্যে মিথ্যা আশাবাদ তৈরি করতে! যার খেসারত সুন্দরবনকে দিতে হবে, তেলের দূষন শরীরে মাখিয়ে নানান অসুখ বিশুখের শিকার হয়ে এই স্থানীয় শিশু কিশোর বনজীবিদের দিতে হবে।
এদিকে, সকারের ঘোষণা মতো খুলনার পদ্মা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদার স্থানীয়দের কাছ থেকে তেল কিনে তিনে শুরু করেছে।
পদ্মা অয়েলের ঠিকাদার আবদুল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম বাবুল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত প্রতি লিটার ৩০ টাকা দরে এই স্থানীয়দের কাছ থেকে ৩৬০০ লিটার (১৮ ব্যারেল) তেল কেনা হয়েছে বলে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ শুক্রবার দুপুর সোয়া ৩টায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে তেল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শেলা নদীর জয়মনি থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন খালে তেল সংগ্রহের কাজ করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়ররা স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ পরিবারের নারী ও শিশুরাও হাড়ি পাতিল নিয়ে এ কাজে নেমে পড়েছে।
ঘটনাস্থাল সংলগ্ন কাটাখালি, জয়মনি, জয়মনির ঘোল ও বাদমতলা এলকায় তেল কেনার জন্য ৪টি বুধ খোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে রাষ্টেয়ত্ব খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সুন্দরবনে যাত্রাবিরতী কালে দুর্ঘটনায় পড়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’।
এমটি টোটাল নামে অপর আর একটি ট্যাঙ্কারে ধাক্কায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারটি এক পাশ ফেটে যায় এবং শ্যালা নদীতে ডুবতে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে।
দুর্ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটি উদ্ধার করা হয়।
তবে বন কর্মকর্তাদের ধারণা, এ সময়ের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েলেবাহী ট্যাঙ্কারটির পুরে তেল ছড়িয়ে পড়েছে বাদাবনের ৩৪ হাজার হেক্টরের বেশি এলকার নদ- নদী ও খালের।
পরিবেশবিদ ও বন্য প্রানী গবেষকদের ধারনা, এর ফলে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী-শুশুক ডলফিন ও বনের প্রাণবৈচিত্র হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More