তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মংলা বন্দরে।
সমুদ্র বন্দরটির গুরুত্ব পূর্ণ এই নৌরুটি হটাৎ করে বন্ধ হওয়ায় বন্দরে আসা পণ্যবাহী জাহাজের খালাস ও পরিবহণ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আমদানিকারকদের পড়তে হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির মূখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে মংলা বন্দরের আন্তর্জাতিক নৌরুট ঘসিয়াখালী চ্যানেল ভরাট হয়ে বন্ধ হওয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বন্দরে যাতায়াতকারী অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচলে। ওই সময় দ্রুত চ্যানেলটি ড্রেজিং করা সম্ভব না হওয়ায় ২০১১ সালের এপ্রিলে মংলা বন্দরকে সচল রাখা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের অর্থনীতির বিবেচনায় বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের শ্যালা নদীর মধ্য দিয়ে নৌরুট চালু করে। অতিরিক্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার ঘুরে শ্যালা নদীর নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০ নৌযান ও মাদার ভেসেল থেকে মালামাল ওঠা-নামানোর জন্য লাইটারেজ জাহাজ যাতায়াত করে।
৯ ডিসেম্বর ট্যাঙ্কার দূর্ঘটনার পর সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এতে লাইটারেজ জাহাজ না আসতে পারায় মংলা বন্দরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে আমদানিকৃত মালামাল খালাস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় বন্দরে জাহাজ আসা যাওয়ায় কোন অসুবিধা হচ্ছে না জানিয়ে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কেএম আকতারুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের হিরণপয়েন্ট হয়ে পশুর নদীর হারবাড়িয়ায় পণ্যবাহী জাহাজগুলো নোঙ্গর করছে। বর্তমানে ইউরিয়া সার, গম ও ক্লিংকারবাহী (সিমেন্ট তৈরীর কাঁচামাল) মোট পাঁচটি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছে।
মূলত বার্জ ও কার্গো সংকটের কারণে জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসে সমস্য হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের দিন যাচ্ছে আর জাহাজের ভাড়া বাড়ছে।
শ্যালা নদীর নৌরুটটি বন্ধ থাকায় বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ আপতত সুপতি দিয়ে বিকল্প একটি রুট ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুপতির বিকল্প রুটটি ব্যবহারে করতে হলে নৌযান গুলোকে বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণকারী বার্জ বা কার্গোর মাষ্টারদের ওই নৌপথটি একেবারেই অপরিচিত।
আমদানিকারক ট্রাস্ট শিপিং এজেন্টের সত্ত্বাধিকারী ফেরদৌস আহমেদ বাগেরহাট নিউজকে বলেন, বন্দরের জাহাজ আগমনের পর নির্ধারিত সময়ে ওই জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা না গেলে আমদানিকারককে প্রতিদিন জাহাজের মালিককে চুক্তিবাদে অতিরিক্ত সর্বনিন্ম দশ হাজার ইউএস ডলার এবং বন্দরকে অন্তত সাতশ ডলার করে দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমানিকারক ও পরিবহণকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে।
পণ্য পরিবহণের কাজে নিয়োজিত মেসার্স ইষ্টার্ণ ক্যারিয়্যারের প্রতিনিধি শাহ আলম তুহিন দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় বিএডিসি’র (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) আমদানিকৃত প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন সার নিয়ে বর্তমানে বিপাকে পড়েছি। এ নৌরুট দিয়ে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকায় প্রায় ৬দিন ধরে (মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের) হারবাড়িয়া এলাকায় কার্গোগুলো ইউরিয়া সার নিয়ে বসে আছে।
বিএডিসির আমদানি করা এই সার নিয়ে আমাকে আশুগঞ্জে পৌছে দিতে হবে। কিন্তু বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ যে রুট দিয়ে আমাদের পণ্য পরিবহণ করতে বলেছে তা আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তারপরও আমরা বাধ্য হয়ে বসে রয়েছি।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মংলা শাখার সভাপতি মো. আনোয়ার চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রতিদিন শ্যালা নদীর এই নৌ-রুট দিয়ে একশ’র অধিক নৌযান চলাচল করত। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) শ্যলা নদীতে ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এই রুটটি বন্ধ করে দেয়।
এর পর থেকে দেশের কোন স্থান থেকে পণ্যবাহী কার্গো, বার্জ, ট্যাংকারসহ কোন নৌযানই মংলা বন্দরে আসতেও পারছেনা যেতেও পারছেনা। ফলে মংলা বন্দরে আসা জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বঙ্গোপসাগরের সুপতি দিয়ে পণ্য পরিবহণের যে পরামর্শ দিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই পথ একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে দুরত্ব। যারা পণ্য পরিবহণ করে থাকেন তাদের কার্গো বা বার্জ বঙ্গোপসাগর দিয়ে চলাচলের উপযোগী না।’
তিনি আরো বলেন, পরিবহণ সংকটের কারনে নৌযান শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে বন্দর সংশ্লিষ্টদের।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More