বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পশুর চ্যানেলে ঢুকে পড়ায় লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে দু’টি মাছ ধরা ট্রলারের মালিককে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে সাগরে আকস্মিক ঝড় শুরু হলে আশ্রয়ের জন্য পশুর চ্যানেল দিয়ে মংলার দিকে ঢুকে পড়ে এফবি আশীর্বাদ ও এফবি মনিষা। অনুপ্রবেশের দায়ে ওই দিন বিকেলে ঢাংমারি স্টেশন এলাকা থেকে এফবি আশীর্বাদকে এবং মরা পশুর ক্যাম্প এলাকা থেকে এফবি মনিষাকে আটক করে বন বিভাগ।
ট্রলার দু’টিতে মোট ৫৩ জন জেলে ছিলো। তাদেরও আটক করা হয়।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) মামলা দায়ের পূর্বক ট্রলার প্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিউর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় বাগেহরাট ইনফো ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পশুর ও শিবসা নদীর দুই পাড়ে সুন্দরবন রয়েছে। সুন্দরবনের সম্পদ সুরক্ষায় ছয় মাস আগে পশুর ও শিবসা নদীপথে সুন্দরবনের ভেতরে সব ধরনের ছোট ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো।
সম্প্রতি সুন্দরবনে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী শিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে এই দু’টি চ্যানেল দিয়ে সব ধরনের ট্রলার ও নৌকা চলাচল মৌখিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।
জরিমানা করা এফবি আশীর্বাদের মাঝি কালু মিঞা সোমবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, রোববার ভোর রাতে ঝড় শুরু হলে ঝড়ের হাত থেকে নিজেদের জীবন ও ট্রলার রক্ষা করতে তিনি ট্রলার নিয়ে পশুর চ্যানেলে ঢুকে পড়েন। কিন্তু বন বিভাগ জরুরি দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে তাদের হয়রানি করছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ওই রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোনো সতর্ক সংকেত ছিলো না। আবহাওয়াও ভালো ছিল। তার ট্রলারসহ দুই শতাধিক ট্রলার বঙ্গোপসাগরের ফেয়ার ওয়ে বয়া ও ডুবো জাহাজ পয়েন্টের বাইরে পশুর চ্যানেলের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করছিলো। এ সময় ঝড় শুরু হলে নিরাপত্তার জন্য পশুর চ্যানেলে ঢুকে পড়াই তাদের জন্য উপযুক্ত ছিলো। কিন্তু বন বিভাগের মৌখিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিকাংশ ট্রলার মহিপুর, পাথরঘাটা ও কুয়াকাটার দিকে চলতে শুরু করে। কিন্তু এতে তারা ঝড়ের মুখে পড়ে এবং অনেক ট্রলার ডুবে যায়।
নিষিদ্ধ করে না রাখলে ট্রলারগুলো পশুর চ্যানেলে ঢুকতে পারলে ঝড়ে মৎস্যজীবীদের ক্ষতি আরও কম হতো বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা জেলেদের সব থেকে বড় সংগঠন দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহানূর রহমান শাহীন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প পথ হিসেবে পশুর চ্যানেল বঙ্গোপসাগরের মৎস্যজীবীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়।
বিপদের মুখে পড়ে আশ্রয় নিতে আসা মাছ ধরা ট্রলারকে এভাবে জরিমানা করার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে দুর্যোগকালীন সময়ে এই দু’টি চ্যানেল ব্যবহারে শৈথিল্য দেখানো হবে কি না-জানতে সোমবার সন্ধ্যায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More