সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, পাচার, নির্যাতন, সাইবার অপরাধসহ বিভিন্ন কারনে সমাজে বাল্য বিয়ে ঠেকানো যাচ্ছেনা।
‘কন্যা শিশুর নিরাপদ পরিবেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বুধবার (১১ নভেম্বর) বাগেরহাট সরকারি পি.সি. কলেজ মিলনায়তনে বন্ধুসভার ও ব্রাক আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। পাচার, ধর্ষণ, শিশুশ্রম, যৌন নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাস, সাইবার অপরাধসহ বিভিন্নভাবে কন্যাশিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। এই নির্যাতন থেকে সহজ পরিত্রাণের উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে বাল্য বিবাহকে।
কিন্তু বাল্য বিবাহ একজন কন্যাশিশু বা কিশোরীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি গ্রহণের স্বাভাবিক অবস্থাকে ব্যাহত করছে। এভাবে কন্যাশিশুরা অন্যায়, নির্যাতন ও বৈষম্যের দুষ্ট চক্রে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে।
বাগেরহাট বন্ধুসভার উপদেষ্টা অধ্যাপক কমল কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক এই আলোচনা সভায় অন্যান্যেও মধ্যে বক্তব্য দেন, সরকারি পি.সি. কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেখ মোস্তাহিদুল আলম, জাতীয় মহিলা সংস্থা বাগেরহাট শাখার চেয়ারম্যান অ্যাড. শরীফা হেমায়েত, নারী নেত্রী এবং সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. পারভীন আহমেদ, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট বাগেরহাট জেলা কমিটির ফোকাল পার্সন রিজিয়া পারভীন, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি মো. মারুফ পারভেজ ও বাগেরহাট বন্ধুসভার নারী বিষয়ক সম্পাদক নাজমা রহমান।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে বক্তারা বলেন, দেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ আঠেরো বছরের কম বয়সী। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৪৮ ভাগ কন্যাশিশু। দেশে এখনও পনেরো বছরের নীচে শতকরা ২৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়। আঠেরো বছরের নীচে বিয়ে হয় শতকরা ৬৫ ভাগ মেয়ের। ১১ বছরের নীচে বিয়ে হয় শতকরা দুই ভাগ মেয়ের।
সভায় জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশে ৪৯০ জন ধর্ষিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৯ জনের বয়স সাত থেকে বারো বছরের মধ্যে। ২৯ জনের বয়স চয় বছরের নীচে। আলোচকরা এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন।
বক্তারা আরও বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষায় বাংলাদেশী কিশোরীদের অন্তর্ভুক্তির হার এখন শতকরা ৬৯ ভাগ। পাশাপাশি মাধ্যমিক শিক্ষায় ঝড়ে পড়ার হার শতকরা প্রায় ৪৭ ভাগ। ফলে প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি অনেক কম। একই ভাবে বাংলাদেশে কিশোরীদের জীবিত সন্তান জন্মদানের হার প্রতি হাজারে ১১৩ যা, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে এবং টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাংলাদেশে কিশোরীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন প্রথম আলোর বাগেরহাট প্রতিনিধি আহাদ হায়দার ও বাগেরহাট বন্ধুসভার সভাপতি প্রকৌশলী নাসিফ কবির আকাশ।
বন্ধুসভার সদস্য ইরতিজা শেখ সঞ্চালনায় কন্যাশিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতা করেন সরকারি পিসি কলেজের একাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী শারমিন সুলতানা ও বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের আফিয়া জান্নাত অনন্যা। পরে শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More