সীমানা ও ভোটার-সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় তফসিল ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় স্থগিত হয়ে গেছে মংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন। হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারা।
বিক্ষুব্ধরা দাবি করেন, বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী নিজের লোক দিয়ে মামলা করিয়ে এ নির্বাচন স্থগিত করিয়েছেন। তাঁরা পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে মেয়র বিষয়টিকে আইনি প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেছেন।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) আদালতের আদেশে মংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সীমানা ও ভোটার-সংক্রান্ত আইনি জটিলতার কারণে গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচনের সব কার্যক্রমের ওপর এই স্থগিতাদেশ দেন আদালত। যদিও ২৪ নভেম্বর ইসি অন্য সব পৌরসভার সঙ্গে মংলার তফসিলও ঘোষণা করে।
গত মঙ্গলবার স্থগিতাদেশের কপি হাতে পায় জেলা নির্বাচন কার্যালয়। নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপসচিব মহসিনুল হকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘোষিত তফসিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এ স্থগিতাদেশের ফলে মংলা পোর্ট পৌরসভায় মনোনয়নপত্র বিতরণ, গ্রহণসহ ভোটের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এই পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের আলহাজ শেখ আবদুস সালাম, মো. শাহজাহান শিকারী ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) তালুকদার আখতার ফারুক। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহকারী তালুকদার আখতার ফারুক নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে নেপথ্যে থেকে সুকৌশলে এই মামলা করিয়েছেন। মেয়র পৌরসভায় চলমান উন্নয়নকাজের কমিশন নেওয়ার স্বার্থে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’
জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) সমর্থিত সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী এইচ এম দুলাল বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন হওয়াই উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। চলমান জটিলতা নিরসন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান তিনি।
তালুকদার আখতার ফারুক, আলহাজ শেখ আবদুস সালাম ও মো. শাহজাহান শিকারী অবিলম্বে বর্তমান মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানান।
জামায়াত নেতা ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মো. হোসেন বলেন, ‘বর্তমান মেয়র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন স্থগিতের এ মামলা করিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর প্রার্থী সরোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে তফসিল ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হয়ে আসছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত পৌরসভার সীমানা বাড়েনি বা কমেনি। সীমানা জটিলতা দেখিয়ে আদালতে রিট করে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না।’ তিনিও প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানান।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সুমি লীলা বলেন, বর্তমান মেয়র নির্বাচন বানচালের জন্য তাঁর নিজস্ব লোকজন দিয়ে মামলা করিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই মামলার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। তাই উচ্চ আদালতে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলীর সমর্থকদের মধ্যে খুশির ভাব বিরাজ করছে। তাঁদের মতে, পৌরসভায় এখনো বেশ কিছু উন্নয়নকাজ চলমান। বর্তমান মেয়রের তদারকিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চলমান উন্নয়নকাজ শেষ হলে তাঁর জনপ্রিয়তা ও ভোটার বাড়বে।
বর্তমান মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, ‘এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসন করে দ্রুত নির্বাচন জরুরি।’
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মংলা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় রয়েছে নয়টি ওয়ার্ড। এখানে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৪৯ জন। যার মধ্যে ১৫ হাজার ২০ জন পুরুষ ও ১২ হাজার ৯২৯ জন নারী ভোটার। এ পৌরসভায় দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দরের অবস্থানের কারণে সারা দেশে এর গুরুত্ব অনেকাংশে বেশি।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More