সুন্দরবন (বাগেরহাট) থেকে ফিরে: সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রাম উত্তর রাজাপুর। গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে ভোলা নদী। এক সময়ের যৌবনা ভোলা নদী এখন মৃত প্রায়। মরা নদীর মৃদ্যু স্রোত ধারাই বিভক্ত করেছে লোকালয় সুন্দরবন। এক পাশে গ্রাম অন্য পাশে বন।
নদীর পূর্বপাড় লোকালয় স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ভোলারপাড় নামে। অপর পাড়ে সুন্দরবনের অন্যতম শুক্ন বিল নাংলি। রোববার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় আগুন লাগে নাংলি এলাকায়।
সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় মারাত্মক উদ্বেগ বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ভোলার পাড়ের বাসিন্দা জুলহাস শিকদারের। স্থানীয় ভোলার পাড় আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর এ ছোট্ট কিশোর কি যেন এক টানে সোমবার সকাল থেকেই রয়েছে সুন্দরবনে।
সোমবার (২৮ মার্চ) জুলহাস শিকদারের সঙ্গে যখন দেখা ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টা ছুঁই ছুঁই। মাত্র নদী পার হয়ে বাড়ি ফিরছিল ক্লান্ত জুলহাস। আমারাও তখন বেশ ক্লান্ত। কিন্তু তখনও সুন্দরবনে আগুন লাগা দুর্ঘটনাস্থল থেকে বেশ দূরে আমারা। পৌঁছাতে হবে…। কিন্তু ক্লান্তির চেয়েও বড় দুশ্চিন্তার নাম তখন ভয় আর আতঙ্ক। দুর্গম সুন্দরবনে পথ… গা ঝিম ঝিম করছে..।
পথ দেখাতে রাজি হলেন জুলহাস। সাহসী কিশোরের দেখানো পথে চলছি আমারা। সাহসী জুলহাসের সঙ্গে আমাদের পথ দেখাচ্ছে জুবায়ের, আবু বক্করসহ আরও কয়েক কিশোর। চলতে চলতে ভীত স্বরে চলছে কথা।
নিরাপত্তার জন্য সাহসী কিশোরদের ভরসা থাকলেও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধে অস্ত্রধারী বনকর্মী আব্দুল সামাদকে সঙ্গী করি আমারা। সাহসী জুলহাসকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।
বনকর্মী আব্দুল সামাদ বলেন, এই ছোট ছেলেটা কঠোর পরিশ্রমী। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত বন বিভাগ আর দমকল কর্মীদের সাথে একটানা আগুন নেভাতে কাজ করেছে সে।
তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে, দমকল কর্মীরাও কাজ শেষ করেছেন। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগরে চাঁদপাই রেঞ্জের ধান সাগর স্টেশনের নাংলি এলাকায় আমারা। সঙ্গী জুলহাস শিকদার তখন বলছিলেন, সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার যুদ্ধের কথা।
জুলহাস জানায়, তার বাবা সবুর শিকদার সুন্দরবনের জেলে। বনের নদীতে মাছ ধরে চলে তাদের জীবন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার মুখে শুনেন বনে আগুন লেগেছে। তার পর ছুটে আসেন বনে।
বনকর্মীদের সঙ্গে তখন থেকে কাজ শুরু তার। ফায়ার সার্ভিসের পানি দেওয়ার পাইপ ভোলা নদী পার করেছেন নিজ হাতে। মাথায় করে বনের ভেতর দেড় কিলোমিটার পথ বয়ে নিয়েছেন।
জুলহাসের সঙ্গি ছিলো ভোলার পাড়ের আরও কয়েক কিশোর। আগুন নিয়ন্ত্রনে ফায়ার লাইন তৈরি থেকে শুরু করে সকল কাজেই বন ও দমকল কর্মীদের সহায়তা করেছে তারা। জুলহাস বলে, এ বনে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলে। এখন থেকে কাঠ পাই, মধু পাই।
বনে আগুন লাগলো!
জুলহাসের মন্তব্য জানতে চাইলে খুব ছোট্ট উত্তর ‘সুন্দরবন আমার মায়ের মতো। এ বনে আমাদের গরু ঘাস খায়, আগুনে পুড়ে গেলে ওরা ঘাস পাবে কই। আমরা কাঠ পাব কই। কত পশু পাখি থাকে বনে। পুড়ে গেলে কই যাবে ওরা!’
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More