সবুজ হত্যার বিচার দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

দুটি আলাদা ঘটনায় পূর্ব ক্ষোভ থেকে কলেজছাত্র সবুজ বিশ্বাসকে (১৭) হত্যার পরিকল্পনা করে তারই দুই বন্ধু। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী হত্যার পর লাশগুম করতে চেয়েছিল তারা।
বাগেরহাটের চিতলমারীতে কলেজছাত্র সবুজ হত্যার প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
নিখোঁজের এক সপ্তাহ গত রোববার দুপুরে চিতলমারী থানার ২০০ গজ অদূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ডোবা থেকে সবুজের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ১৩ আগস্ট বিকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
নিহত সবুজ বিশ্বাস চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের শিবপুর কাটাখালী গ্রামের কৃষক পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে। সে চিতলমারী শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে পুলিশ সবুজের সমবয়সী দুই বন্ধু সাব্বির খান ও লিমন খানকে পার্শবর্তী গোপালগঞ্জ জেলা থেকে আটক করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী সবুজের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতেই সবুজের বাবা পরিতোস বিশ্বাস চিতলমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সবুজের কয়েকজন সহপাঠী বন্ধু বলছে, প্রায় তিন মাস আগে পর পর দুটি ঘটনায় সবুজের সাথে সাব্বির ও লিমনের দন্দ হয়েছিল। সেই ক্ষোভ থেকে তারা সবুজকে হত্যার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। পুলিশও প্রাথমিক তদন্তে একই রকমের তথ্য পেয়েছে।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাহদৎ হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন,সবুজের ওই দুই বন্ধু পরিকল্পিত ভাবে ডোবার পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে প্রথমে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। পরে তার হাত-পা বেঁধে এবং কাঁথা পেচিয়ে মৃতদেহ ডোবার কচুরিপানা নিচে লুকিয়ে রাখে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার ঘটনার ও লাশ লুকিয়ে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের দুটি কারণ দেখছে পুলিশ। একটি প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সিগারেট খাওনা নিয়ে বন্ধু লিমনের সাথে কথা-কাটাকারি এক পর্যায়ে তাকে ছুরি দিয়ে পোঁচ দিয়েছিল সবুজ। ওই ঘটনার কিছুদিন পর লিমন, সাব্বিরসহ কেয়েকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডোবার পাশের লাল্টুর কোচিংয়ের পিছনে একটি মেয়ের সাথে গল্প করছিল। বিষয়টি এসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জেনে যায় এবং এর প্রেক্ষিতে লিমন ও সাব্বিরসহ ১১ জনকে বহিস্কার করে। লিমন ও সাব্বিরের ধারণা সবুজ বিষয়টি স্কুলের শিক্ষকদেরকে জানায়।
এই দুই ক্ষোভ থেকেই তারা দুজন সবুজকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার আটক দুজনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হয়েছে।
আটক সাব্বির খান (১৭) উপজেলার আড়ুয়াবর্ণী গ্রামের আবদুর সালাম খানের ছেলে এবং লিমন খান (১৭) একই গ্রামের মো. হাসমত খানের ছেলে। এদের মধ্যে সাব্বির ৯ম শ্রেণিতে এবং লিমন ১০ শ্রেণিতে পড়তো।
সবুজের চাচা সন্তোষ কুমার বিশ্বাস জানান, নিখোঁজের পর দিনই ১৪ আগস্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছিল। সবাই সবুজকে খুঁজছিল। এর মধ্যে সুবজের মুক্তিপন চেয়ে ৯০ হাজার টাকা দাবি করে নিখোঁজের ৩ দিন পর পরিবারের কাছে মুঠোফোনে চাঁদা দাবি করা হয়। চট্রগ্রামের একটি ঠিকানা বলে বিকাশের মাধ্যমে তারা টাকা পরিশোধ করতে বলেছিল। তারা টাকা দিতেও রাজি হয়েছিল। কিন্তু আগে সবুজের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল।
সবুজের কৃষক বাবা পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সবুজ ছোট। মেয়ে প্রিয়াংকার বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। একমাত্র ছেলে সবুজকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। কিন্তু ওরা সব শেষ করে দিল।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনুকুল চন্দ্র সরকার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ফোন ট্রাকিংয়ের সুত্র ধরে পুলিশ গোপালগঞ্জের মোহাম্মদ পাড়ার এলাকা থেকে লিমন এবং সাব্বিরকে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী লাল্টু বিশ্বাসে কোচিং সেন্টারের পেছনে ডোবা থেকে সবুজের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নিহত সবুজের মোটরসাইকেল এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি, কাচি গুনার তার উদ্ধার করেছে।
ওসি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে নিহত সবুজের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সব দিক বিবেচনায় তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এবং এর সাথে আরও কেউ জড়িত কি না তা উদঘাটনে তদন্ত চলছে।’
বিচার চেয়ে বিক্ষোভ:
এদিকে কলেজছাত্র সবুজ হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সোমবার চিতলমারী বাজারে বিক্ষভ করেছে এলাকাবসী।
সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বাজারে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী চিতলমারী থানা ও উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে।
এইচ//এসআই/বিআই/২০ আগস্ট ২০১৮
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More