
আবদুল মান্নান তালুকদার।
আসামির জামিন আদেশ বাতিল করে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে প্রিজনভ্যানে না তুলে আসামির ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে তাঁকে কারাগারে পৌঁছে দেওয়া হয়। সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বাগেরহাটে এ ঘটনা ঘটেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১১০ কোটি টাকা পাচারের মামলায় বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ গোলক চন্দ্র বিশ্বাসের আদালতে হাজির হয়েছিলেন নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের আদেশের পর এজলাস থেকে আসামি বের হওয়ার পর তাঁর আইনজীবী ও অনুসারীরা মান্নান তালুকদারকে চারদিক থেকে ঘিরে আদালত থেকে নিচতলা পর্যন্ত পৌঁছে দেন। যাতে সংবাদকর্মীরা তার ছবি ধারণ না করতে পারে। পরে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে জেলা কারাগার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুর নেতৃত্বে অন্তত ৪০ জন আইনজীবী আসামি আবদুল মান্নান তালুকদারের পক্ষে জামিনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বাগেরহাটের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আবু দাউদ খান বলেন, ‘প্রিজনভ্যান অনেক সময় ব্যস্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে সরাসরি আসামিকে দিয়ে আসাও হয়। তবে আসামির গাড়িতে কারাগারে প্রেরণ করা হয় না। আমি আসলে ওই সময় ছিলাম না, পুলিশ অফিসে ছিলাম। দেখি আসলে খোঁজ নেই, কী আসলে বিষয়টি?’
গত ৩০ মে দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান তালুকদার ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় ১১০ কোটি টাকা পাচারের একটি মামলা করেন। এই মামলার অপর আসামি নিউ বসুন্ধরা রিয়েল স্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মামলার পর থেকেই পলাতক।
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে অবস্থিত।
দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী বলেন, গত ৩০ মে বাগেরহাট শহরের নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে। ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ৪ সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন মান্নান তালুকদার। ওই জামিনের মেয়াদ শেষে সোমবার তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মান্নান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন এবং চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ইমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন, যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থী।
গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই ঘটনা অনুসন্ধান শেষে মামলা করে দুদক। মামলা তদন্তে এই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে খোঁজা হচ্ছে।
এজি//এসআই/বিআই/১৫ জুলাই, ২০১৯
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More