প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাটে প্রবেশে কড়াকড়ি, চিতলমারী সীমান্ত বন্ধ

বাগেরহাটে প্রবেশে কড়াকড়ি, চিতলমারী সীমান্ত বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম

'বাগেরহাট এখনও করোনামুক্ত, বাঁচার উপায় একটাই'

Posted by bagerhatinfo.com on Friday, April 10, 2020

লকডাউন ঘোষণা না হলেও বাগেরহাটের সবগুলো প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসিয় অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত চলাচল ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্তবর্তী গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার সাথে জেলার সড়ক।

এরআগে বৃহস্পতিবার সীমান্তবর্তী টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় দুজন করোনা রোগী সনাক্ত হয়। মূলত এরপর থেকেই করাকাড়ি আরোপ করা হয়েছে জেলায় সব ধরণের প্রবেশে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে টুঙ্গিপাড়া-চিতলমারী সড়ক।

অন্য জেলা থেকে বাগেরহাটে প্রবেশের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতেও কঠোর হচ্ছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মিলিয়ে মোট ২৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাছ করেছে অপ্রয়োজনীয় চলাচলা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী সেবা ব্যতীত সব ধরণের যান চলাচল নিষিদ্ধ করে গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত ওই গণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ায় ঐ সকল জেলায় কর্মরত লোকজন অন্যত্র প্রবেশের ( নিজ নিজ জেলা অথবা অন্য জেলায়) চেষ্টা করছে। এর প্রেক্ষিতে বাগেরহাট জেলাবাসীকে করোনামুক্ত ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাগেরহাটের সাথে পার্শ্ববর্তি জেলাগুলোর সকল সীমান্ত এবং আন্ত:উপজেলার সীমান্তসমূহে জরুরী সেবা প্রদানে নিয়োজিত যানবাহন যেমন রোগীবাহী গাড়ি, ঔষধ সরবরাহ গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি, কৃষিপণ্য ও সকল ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মালবাহী গাড়ি, সরকারি গাড়ি ব্যতীত সকল প্রকার যানাবাহন (যন্ত্র চালিত) চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পরও ঘরে থেকে রেব হচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। রাস্তার মোড়ে কিছু পর পরই জড় হচ্ছেন মানুষ। পুলিশ ও প্রশাসনের লোক দেখলে ছুটে পালাচ্ছেন। কিন্তু কিছু পরেই সামাজিক দূরত্বের নীতি ভাঙছেন তারা।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীনুজ্জামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসনের ১৩ ও উপজেলা প্রশাসনের ১৬টি মিলিয়ে মোট ২৯ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে জেলা জুড়ে। তারা সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় চলাচল ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন।

পুলিশের সহযোগীতায় বৃহস্পতিবার জেলায় মোট ৫৬ জনকে ৩০ হাজার ৮০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের সাথে চিতলমারীর সড়ক যোগাযোগ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যখন শুরু হলো তখন আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। সামাজিক দুরত্ব মানিনি। ফলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। একজন থেকে আরও একাধিক জনের মধ্যে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে।

‘এখনো কিছুটা সময় আছে, করোনা থেকে বাঁচতে আমাদের একটাই কাজ – তাহলো ঘরে থাকা।’

বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ যদি নিয়ম মেনে চলি এবং যার শরীরে এই রোগে উপসর্গ রয়েছে তিনি যদি ঘরে থাকেন অথবা স্বাস্থ্য বিভাগে এসে চিকিৎসা নেন তাহলে অন্যের মধ্যে নতুন করে সংক্রমিত হবে না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে বাগেরহাটে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি থাকা কারও শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাইনি। বাগেরহাবাসী এখনো ভাল আছে, এই অবস্থা ধরে রাখার সুযোগ আছে আমাদের। এজন্য ঘরে থাকার পাশাপাশি কোন এলাকা থেকে লোক আসাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সিএস বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা বাগেরহাট সদরে দু’জন, রামপালে একজন এবং চিতলমারীতে নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলার সবগুলো সীমান্তবর্তি এলাকায় চেকপোস্টের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় চলাচল ও গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাগেরহাট এখন পর্যন্ত করোনা মুক্ত আছে।

জেলা থেকে কেউকে বাগেরহাটে না আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই মূহুর্তে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, রাতের আঁধারে অন্য জেলা থেকে পায়ে হেটে অলিগলি দিয়ে কিছু লোক ঢুকে পড়ছে। যেটাকে শতভাগ নিবিড়ভাবে নির্নয় করাটা কঠিন হচ্ছে। তবে আমরা সতর্ক আছি। যারা আসছে আমরা গ্রামে-গঞ্জে বলেছি; ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বর ও স্থানীয় প্রশাসনকে সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে সাথে সাথে তারা জানান।

বাইরের জেলা থেকে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ আক্রান্ত জেলা থেকে যদি কেউ আসে, তাদের বাড়িতে আমরা হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। আমরা ইতমধ্যে এমন কয়েকটি পেয়ে। তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। তার পরও এই প্রবনতাটা আছে। আর অন্যান্য পরিস্থিতি এখনও সাভাবিক আছে বলে জানান তিনি।

এসআই/আইএইচ/বিআই/১০ এপ্রিল, ২০২০

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ