
এমএম ফিরোজ, মংলা ::
সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রচলিত প্রবাদ বাক্য ‘’বাঘের লাফ কুড়ি হাত, হরিণের লাফ একুশ হাত’’।
কিন্তু বাস্তবতা হল বাঘের থাবা থেকে মাঝে মধ্যে রেহাই পেলেও শিকারির ফাঁদ ও গুলি থেকে কোন মেতেই রেহাই পাচ্ছে না সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ।
বর্তমানে সুন্দরবনে হরিণ শিকারি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। লোকালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে। তবে বনবিভাগের রিতিমত সেই গদবাধা দাবি, “শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে”।
সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হরিণের মাংস ব্যবসায়ীরা পেশাদার শিকারিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে মাংস এনে নানা কৌশলে বিক্রি করছে। সেখানকার বেশ কিছু গ্রামে নিয়মিত বসছে হরিণের মাংস বেচাকেনার গোপন হাট বসে। এসব হাটে প্রতি কেজি হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
মংলার জয়মনী, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, কাটাখালী মোড়েলগঞ্জের ঝিউধরা, গুলিশাখালী, সন্ন্যাসী, শরণখোলার আমড়াতলা, ধানসাগর, তাফালবাড়ী, চালিতাবুনিয়া, বগি দাকোপের ঢাংমারী, বানিশান্তা, খাজুরা প্রভৃতি সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামে সময়-সুযোগ বুঝে শিকারিরা অনেকটা প্রকাশ্যেই হরিণের মাংস বিক্রি করে থাকে। এক শ্রেণির ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে হরিণের মাংস খুবই প্রিয়। এ ছাড়া কিছু শৌখিন প্রকৃতির মানুষ হরিণের চামড়া ও শিং নিজেদের সংগ্রহে, বিশেষ করে বাসা-বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পছন্দ করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিণের মাংস, চামড়া ও শিং-এর ব্যাপক চাহিদার কারণেই পেশাদার শিকারিরা হরিণ নিধনে মেতে ওঠে। এ ছাড়া এক শ্রেণির ধর্নাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিতান্তই সখের বশে হরিণ শিকার করে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের খুশি করতে ও তদবির হিসেবে হরিণের মাংস সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
আর এসব কারণেই প্রধানত লোকালয়ের অনেক লোকই হরিণ শিকারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। হরিণ শিকারিরা একটি মাঝারি আকৃতির হরিণ শিকার করেই তা কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। বন সংলগ্ন অনেক অভাবী ও গরীব লোক দারিদ্র্যের কারণে হরিণ শিকারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া লোকালয়ের অনেক লোক সৌখিনতার কারণেও হরিণ শিকার করে থাকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানায়, বর্তমানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁদ, বিষ টোপ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হরিণ শিকার করা হচ্ছে। কোনো কোনো সময় শিকারি চক্র মাছ ধরার জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে আনছে। পরে শিকার করা হরিণ কৌশলে লোকালয় থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। এ জন্য সংঘবদ্ধ শিকারি চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে।
এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩/৪শ’ টাকা করে কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে টাকা বেশি হলে এজেন্টরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে এ মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।
শিকারিদের তৎপরতার কথা স্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) চৌধুরী আমির হোসেন বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, “আমরা হরিণের মাংস বিক্রি বা পাচারের খবর পেলেই সাথে সাথেই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।”
তিনি জানান, বনকর্মীদের কাজের গতি ও বন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় এনে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের চাঁপাই রেঞ্জে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অতি শিগগির সবগুলি রেঞ্জে চালু হবে। এর ফলে বনকর্মীদের কাজের গতিবিধি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
এ প্রকল্প পুরোদমে শুরু করলে সুন্দরবন এলাকার দস্যু, বনদস্যু, চোরা শিকারি, গাছ পাচারকারী ও অবৈধ জেলে-বাওয়ালীদের হাত থেকে সুন্দরবন রক্ষা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হরিণ শিকারীদের বিভিন্ন সূত্র জানায়, বর্তমানে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁদ, বিষ টোপ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হরিণ শিকার করা হয়। কোন কোন সময় শিকারী চক্র মাছ ধরার জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহিণে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে আনছে।
পরে শিকার করা হরিণ কৌশলে লোকালয় থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। এ জন্য সংঘবদ্ধ শিকারী চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে।এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩/৪শ’ টাকা করে কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে টাকা বেশী হলে এজেন্টরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে এ মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।
এছাড়া প্রভাবশালী ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা অস্ত্র নিয়ে হরিণ শিকার বা শিকারের উদ্দেশ্যে গহীণ সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন এমন নানাবিধ ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: এমএম ফিরোজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More