সমানে-সমানেই নাকি হয় লড়াই, যুদ্ধ ! কিন্তু এখানে যুদ্ধ পাখি আর পুলিশের মধ্যে। বাগেরহাটের রামপাল কমপ্লেক্সে চলছে টিকে থাকার এ যুদ্ধ!
এই অসম যুদ্ধে একে অপরের মুখোমুখি তারা। একদল চাইছে অন্যদলকে হটাতে। কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছেনা কেউ।
রামপাল থানা কমপ্লেক্সে প্রবেশ কর তেই হাজারো পাখির কিচির-মিচিরে মন ভরে যাবে যে কারোরই। শতশত পানকৌড়ি আর বক বাসা বেঁধেছে থানার একমাত্র পুকুরের চারপাশের মেহগনি, শিরিষ, খেজুর গাছে।
কোন প্রকার বিনা ঘোষণাতেই পাখিরা এই গাছগুলোকে করেছে তাদের স্থায়ী অভয়াশ্রম। এখানেই তারা বাসা বেঁধে প্রজনন, বাচ্চা পালনের কাজ সারছে নিশ্চিন্তে।
ঘের আর জলা-জঙ্গলে জেলা বাগেরহাট এমনিতেই এক সময় ছিল শীতের অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু অবাধে পাখি শিকারে পাখিদের আনাগোনা এক সময় নেমে যায় শূন্যের কোটায়।
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা এমনিতেই বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। এখানে গ্রামের মধ্যেও অনেকে দেশি বন্দুক বানায় বলে কথিত আছে।
বর্তমান আইনের চোখে পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও বন্দুকের ছড়াছড়িতে একেবারে বন্ধ হয়নি পাখি শিকার। তাই উপায়ন্তর না দেখে শতশত পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছে থানা কমপ্লেক্সের গাছ গুলোতে। যেন পাহারা চাইতে পুলিশের বাড়িতে হানা!কিন্তু এতে বাধ সাধছে পুলিশ। পাখিদের এই আশ্রয় গ্রহণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে থানা প্রশাসন। পাখি তাড়াতে কয়েকবারই তারা কেটেছে গাছের ডাল। কিন্তু তাতেও দমেনি পাখির দল। কেটে ফেলার পরও গাছের অবশিষ্ট ডাল-পালাতেই জড়াজড়ি করে স্থান করে নিয়েছে তারা।
পাখিদের বিরুদ্ধে পুলিশের এ অবস্থান কেন জানতে চাইলে থানার এক এসআই শোনান পাখি-পুলিশের টানাপড়েনের গল্প।
তিনি বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা রামপাল একটি লবণ কবলিত জনপদ। নদী-খাল, টিউবওয়েল সবখানের পানিতেই লবণের আগ্রাসন। এ পানি কোন কাজেই ব্যবহার করা যায় না। তাই থানার স্টাফসহ এই এলাকার হাজারো মানুষের একমাত্র অবলম্বন থানার এ পুকুরটি। এই পুকুরের পানিতেই চলে সবার রান্না, খাওয়া এবং গোসলের কাজ।
আর এ পানি নিয়েই পাখির সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছে পুলিশের।
থানার মেজোবাবু জানান, পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে হাজার হাজার পাখির বাস হওয়ায় পাখিগুলোর বিষ্ঠা পড়ছে পুকুরে। তাছাড়া বক ও পানকৌড়ি পানি নির্ভর প্রজাতি হওয়ায় তারা বেশির ভাগ সময়ই পুকুরের পানিতে সময় কাটায়।
এতে পাখির বিষ্ঠা পুকুরের পানি নষ্ট করেছে। পানি হয়ে পড়েছে ব্যবহারের অযোগ্য। পুকুরে নামলেই চুলকানিসহ বিভিন্ন ত্বকের অসুখ দেখা দিচ্ছে। আর খাবর কাজে এ পানি ব্যবহার করলে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ। এতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পুলিশের জীবন।
অন্য এক এএস আই জানান, পাখির অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে কয়েকবার গাছের ডাল কাটা হয়েছে। কিন্তু গাছতো একেবারে কাটা যায়না, মাথায় কিছু ডাল রাখাই লাগে। পাখিরা সেই ডালেই আশ্রয় নিয়েছে।
এতো জায়গা থাকতে পাখিরা থানায় কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, ওরা বুঝতে পেরেছে এটা আইনের জায়গা। এখানে কেউ শিকার করবেনা, ঘাটাবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হলো তাহলে তারা ওদের ঘাটাচ্ছেন কেন, জবাবে অন্যএক পুলিশ সদস্য বলেন, ভাই নিজেদের জীবন তো বাঁচে না। এই গরমে গোসল না করে থাকা যায়! এই পুকুরই আমাদের একমাত্র খাওয়ার পানির উৎস। কিন্তু পাখির কারণে সেই উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে।
রামপাল থানা গেটের ব্যবসায়ী (শরবত বিক্রেতা) শরাফত বলেন, আরো অনেক পাখি এখানে ছিল। কিন্তু পুলিশের অত্যাচারে অনেক পাখিই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
সূত্র – বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রহমান মাসুদ
রামপাল, বাগেরহাট : সুন্দরবন ভ্রমনের শেষের দিনে বাগেরহাটের রামপালে যাচ্ছিলাম এক বনদস্যুদের গ্রামে। সেখানে যাওয়ার পথে রামপাল থানায় রাখতে হলো গাড়ি। গাড়ি রাখতে গেলে থানার বাবু, মেজোবাবু, ছোট বাবুরা ছুটে এলেন। জানালেন, তাদের দুর্গতি নিয়ে খবর লিখতে হবে।
তারা জানালেন, এক অসম অথচ মানবিক যদ্ধর খবর। পাখি ও পুলিশের যুদ্ধ। দুইপক্ষেরই বেঁচে থাকার লড়াই। লবনের আগ্রাসেন এখানকার মানুষের একমাত্র অবলম্বন থানার পুকুরের জল। এদিয়েই তাদের খাওয়া, রান্না, গোসল চলে। কিন্তু মানুষের লোভের হাত থেকে বাচঁতে হাজার হাজার বক আর পানকৌড়ি আশ্রয় নিয়েছে থানার পুকুর পাড়ের গাছের ডালে। তাদের বিষ্টায় পচেঁ একাকার পুকুরের পানি। যা ব্যবহারের অযোগ্য। পুলিশ পাখি তাড়াতে কয়েকবার গাছের ডালও কেটেছে। কিন্তু পাখি জীবন বাঁচাতে যতোটুকু ডাল আছে সেখানেই বাসা করে বাচ্চা উৎপাদন করছে। বাইরে গেলেই যে শিকারির গুলি। তাই থানাতেই আশ্রয় নিয়েছে তারা।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More