স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
মা-বাবার একমাত্র ছেলে। তাই আশাও ছিল অনেক। কাঠমিস্ত্রি বাবা স্বপ্ন ছিল কষ্টের রোজগারের পড়াশোনা শিখে বড় হবে ছেলে, সংসারের হাল ধরবে।
ছেলে মো. আরিফ হোসেন (২০) বাংলায় অনার্স পড়ছিলেন খুলনা বিএল কলেজে। সাম্প্রতি তার প্রথম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়। তাতে ভালো ফলাফল না হওয়ায় সোমবার বকাঝকা করেন বাবা।
নিয়ে বাবা-মার সাথে কথা-কাটাকাটি হলে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। সকালে একটি ধানক্ষেতে মেলে ওই কলেজ ছাত্রের মরদেহ।
ঘটনাটি ঘটেছে, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য নলবুনিয়া গ্রামে। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা এনিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) সকালে নলবুনিয়া কাসিমুল উলুম কওমী মাদরাসার পেছনের ধান ক্ষেত থেকে পুলিশ তার মরদেহটি উদ্ধার করে। নলবুনিয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আল-আমিন হাওলাদার তার বাবা।
মরদেহটির মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এদিকে আরিফের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ মার্চ পোস্ট হওয়া একটি স্ট্যাটাসে বাবার প্রতি অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। সেটি হুবহু তুলে ধার হলো-
‘আব্বু আমি পারলমা না, তোমার শাসন পুরোপুরি মেনে নিতে। আমি কেন এমন হলাম, এর উত্তর আমার কাছে নাই। আজ তুমি আমার জন্য অপমাণিত। আব্বু আমি পাপী, আমি পারিনি তোমার যোগ্য সন্তান হতে। তোমরা আমার থেকে কতো কিছু আশা করেছিলে, আমি লেখাপড়া করব, কিন্তু আমি পারলমা না। আমি কি করে যেন হেরে গেছি আব্বু, আমি পাপী আব্বু, আমি পাপী।’
নিহতের মা আসমা বেগম কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের একটি মাত্র ছেলে। আর দুটি মেয়ের একজন প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্ট করে ওদের বাবা লেখাপড়া চালাতো। আরিফ পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। কিন্তু এবার রেজান্ট ভালো না হওয়ায় ক’দিন ধরে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করত না। সবসময় মন খারাপ করে থাকতো।
‘এনিয়ে ওর বাবা রাগারাগি করে। তার অনেক স্বপ্ন ছিল ওকে (আরিফ) নিয়ে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।’
ধারণা করা হচ্ছে ক্ষোভে অপমানে আত্মহত্যা করেছে ওই তরুণ। মরদেহটি মাঠে যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার পাশে চালের পোকা মারা (জিংক ফসফেট) ট্যাবলেটের খোঁসা পেয়েছে পুলিশ। আবার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন স্থানীয়দের।
শরণখোলা থানার ওসি মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই তরুণের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পাশে চালের পোকা মারা (জিংক ফসফেট) ট্যাবলেটের খোঁসা পাওয়া গেছে।
‘এটি হত্যা, না কী আত্মহত্যা তদন্ত ছাড়া তা বলা যাচ্ছে না। বাগেরহাট সদর হাসপাতালে মর্গে নিহতের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
এইচ//এসআই/বিআই/২৭ মার্চ, ২০১৮
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More