শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

২৩ অক্টোবর ছিল কবি মোহাম্মদ রফিকের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় কবির জন্মদিনের আয়োজনের এক পর্যায়ে ছোটবোনের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কষ্ট আছে, তাই বলে ভেবো না কোনো প্রাপ্তি নেই। কষ্ট আছে বলে পেয়েছিও অনেক কিছু।’
ছোটবোন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ভাই, তোমার কি কোনও কষ্ট আছে?’ এর উত্তরে এসব বলেন মোহাম্মদ রফিক।
জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতপত্র ‘ভূমি’র কবি মোহাম্মদ রফিক সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন কবি। কথা বলেন কবিতা, জীবন ও বাংলা সাহিত্যের পথচলা নিয়ে।
http://www.facebook.com/inzam18/videos/1942222085825836/
১৯৪৩ সালে ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে জন্ম নেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক। আট ভাইবোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। তাঁর লেখালেখি শুরু ‘সমকাল’ ও ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায়। পাকিস্তান আমলে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্য রসদ যুগিয়েছেন তিনি।
ষাটের দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে মোহাম্মদ রফিককে রাজশাহী কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়, সামরিক আইনে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অনেকদিন কারাভোগ করেন তিনি। তবে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হয়ে তিনি পাস কোর্সে বি.এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি নেন। আশির দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার সময়েও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনামলে কবিতা লেখার কারণে নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হয় এই কবিকে।
অনাড়ম্বরপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে মোহাম্মদ রফিক বলেন, আজ মনে হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় থাকলেও আমি শেকড়ে ফিরে গিয়েছি। নিজের জন্মস্থান বাগেরহাট ও তখনকার মানুষদের নিয়ে কথা বলতে বলতে তিনি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
স্বজনদের পক্ষ থেকে কথা বলতে গিয়ে কবির ভাই সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক বলেন, বাবা তাদের সব ভাইবোনদেরই কড়া শাসনে রেখেছিলেন। কিন্তু বড় ভাইকে কিছু বলতে পারতেন না, কারণ দাদা তাকে বলেছিলেন, রফিক একদিন অনেক বড় হবে, ওর ওপর কখনো খবরদারি করবে না। বাবার সে কথায় কোনো আস্থা না থাকলেও দাদার কথা তিনি মেনে নিয়েছিলেন। আজ বাবা নেই, কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই এটা দেখে খুশি হচ্ছেন যে, দাদার কথাই সত্যি হয়েছে, মোহাম্মদ রফিকের খ্যাতি চিতলী-বৈটপুর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম বলেন, ‘প্রকৃতি আর মানুষকে মোহাম্মদ রফিক একসঙ্গে বেঁধেছেন তার কবিতায়। তার লেখার মধ্যে দিয়ে মানুষ মাটির কাছে ফেরে। এদেশের জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামেও তিনি অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। আশি ও নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের তিনি শক্তি ও সাহস যুগিয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে কেক কাটার পর গান ও কবির লেখা কবিতা আবৃত্তি করা হয়। পরে সংস্কৃতিপত্র ভূমির কবি মোহাম্মদ রফিক সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় কবির সঙ্গে ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, নীলিমা পারভীন, অভিনয় শিল্পী নিয়াজ মোহাম্মদ তারেক,আবৃত্তিকার নাজমুল আহসান,গল্পকার আহসান ইকবাল, রুহুল আসফিয়া, শায়লা কেয়া, ভূমির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মুসফিকুর রহমান টুকু, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ।
অনুষ্ঠানে কবির পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এ সময় কবি পাঠক ও শুভান্যধ্যায়ীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মোহাম্মদ রফিক ইতিমধ্যেই একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কার সহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্নরক্ষার প্রতিবেদন’ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কবি মোহাম্মদ রফিককে নিয়ে প্রকাশিত ভূমির এই সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার অভিজাত বইবিতান ও অনলাইন বুকশপগুলোতে। মূল্য ২৫০টাকা।
এইচ//এসআই/বিআই/২৬ অক্টোবর, ২০১৮
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More