নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম

বাগেরহাটের দুই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। প্রভাতী ও দিবা শাখা মিলিয়ে বিদ্যালয় দুটিতে তৃতীয় থেকে ১০ম শ্রেণিতে লেখাপড়া সাড়ে ৩ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। তবে বিদ্যালয় দুটির ১০৬টি শিক্ষক পদের ৪৬টিই শূন্য দীর্ঘদিন ধরে।
এই চরম শিক্ষক সংকট জেলার প্রধান দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত করছে। শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবিতে বিদ্যালয় দুটির অভিভাবকরা গতকাল বুধবার বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে।
বাগেরহাট সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অভিভাবক ফোরামের ব্যানারে বেলা ১১টা থেকে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়। পরে বিদ্যালয় দুটির চলমান শিক্ষক সংকট নিরসনে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন অবিভাবক ফোরাম।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে জেলার সেরা দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট দীর্ঘ দিনের। মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে পড়ালেখার সুযোগ পায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রতিষ্ঠান দুটির শিক্ষক সংকটের কারণে সাভাবিক পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটিতে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক শিক্ষক আছেন। ফলে সাড়ে ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার শিক্ষকদের। অনেক সময়ই ঠিক মত ক্লাস হচ্ছেনা বিদ্যালয়ে।

তারা বলেন, শিক্ষক সংকটে আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার মান নিশ্চিতে দ্রুত এই চলমান সংকট দূর করতে হবে। এজন্য শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ এবং বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অবিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক আহাদ উদ্দীন হায়দার, যুগ্ম আহ্বায়ক আসমাতুল ফাতিমা ময়না, সদস্য সচিব কল্লোল সরকার, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাকি তালুকদার, মহিলা পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট সীতা রাণী দেবনাথ, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন, জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট লুনা সিদ্দিকী ও পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কাউন্সিলর তালিয়া খাতুন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া দুজন অভিভাবক বলেন, কেবল শিক্ষক সংকটই নয় সংকট আছে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পাঠদানের মানসিকতায়ও। এক দিকে যেমন শিক্ষক সংকট অন্যদিকে আছে কোচিং বাণিজ্য। অনেক ক্ষেত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরাসরি কোচিং না করালেও আমরা জানি বিভিন্ন কোচিং এর সাথে তাদের লিয়াজ। পেছন থেকে তারাই ওই সব কোচিং এর মালিক।
কেবল চলতি বছর শহরের এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া করে অন্তত নতুন করে ৮টি কোচিং সেন্টার চালু হয়েছে। এছাড়া আরও অন্তত ২০টি কোচিং সেন্টার চালু আছে ছোট এই শহরে। কারণে অকারণে অভিভাবকরা বাধ্য হচ্ছে তাদের সন্তানদের কোচিং এ দিতে।
শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবিতে আয়োজিত ওই মানবববন্ধনে অনেক অভিভাবক সঙ্গে নিয়ে আসেন তাদের শিশু সন্তানদেরও।
জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটির সভাপতি ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চলছে। বাগেরহাটের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আমাদের এই দুটি বিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষক সংকট নিরসনে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
বাগেরহাট শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার শিফটে (প্রভাতী ও দিবা) মোট শিক্ষার্থী আছে ৩ হাজার ৭০০ জন। এর প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ ৫৩ জন। তবে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষকের শূন্যপদ ২০টি এবং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শূন্যপদ ২৬ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক মাত্র।
এজি/আইএইচ/টিআই/বিআই/২২ জানুয়ারি, ২০২০
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More