চরমপন্থী পরিচয়ে মোবাইলে বাগেরহাটের বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট দির্ঘ্যদিন ধরে চাঁদা দাবী করার অভিযোগে হরপ্রসাদ হালদার (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বাগেরহাটের এক ব্যবসায়ীর পাঠানো ৫ হাজার টাকা গ্রহন করতে এসে খুলনার ডাক বাংলা এলাকার একটি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে টাকা গ্রহন করতে এসেছিসে বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
বৃহস্পিতিবার দুপুর সাড়ে ৩টার সময় তাকে আটক করা হয়।
আটকৃত হরপ্রসাদ হালদার ওরফে মিঠু বাগেরহাট পৌরসভাস্থ শালতলার এলাকার এ্যাডভোকেট চিত্তরঞ্জন হালদারের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের গুলশাখালী গ্রামে হলেও তাদের পরিবার শহরেই বসবাস করেন।
বাগেরহাট থিয়েটারে নাট্যকর্মী মিঠু ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত এবং শহরের ‘চেনা মুখ’। এদিকে মিঠু ‘চাঁদাবাজী’র অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
গ্রেফতার হরপ্রসাদ হালদার ওরফে মিঠু ভারতের পূনের সেন্ট জর্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ অব ইংলিশ লিটারেচার এ অনার্স সম্পান্ন করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় দেড় মাস ধরে বাংলালিংক এর দুটি মোবাইন নম্বর থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন বিশিষ্ট নাগরিকদের হত্যার হুমকি ও আপত্তিকর ছবি প্রকাশের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।
এই তালিকায় রয়েছেন বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাড. ওহিদুজ্জামান দিপু, বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রীজের সভাপতি শাজাহান মিনা, শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুভাষ দাস, নারী আন্দোলন নেত্রী ও জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সভানেত্রী রেহানা পারভীন লাকি।
এ ছাড়া শহরের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে একই ভাবে মিঠু চাঁদা দাবি করেছে বলে পুলিশ জেনেছে তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অভিযোগ করেননি।
অভিযোগ পাবার পর থেকে পুলিশ ঐ চাঁদাদাবিকারীকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে কাজ শুরু করে। কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া মুঠোফোন থেকে সিমকার্ড বিচ্ছিন্ন করে রাখায় কল ট্রেকিং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না। কিন্তু কয়েকদিন পর পরই তার চাঁদা দাবি অব্যাহত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রত কর অবস্থায় পড়ে বাগেরহাট জেলা পুলিশ।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বাগেরহাট ইনফোকে জানান, সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুভাষ দাসের কাছে আবার ফোন করে নিষিদ্ধ চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনের জন্য ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় চাঁদা না দিলে তকে (সুভাষকে) হত্যার হুমকি দেয় সে।
পুলিশের পরামর্শে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুভাষ তার মোবাইল নম্বর ০১৯৮৬-২৮১৩০৮ এ সুন্দরবন ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। এদিকে টাকা গ্রহন এর স্থান খুলনার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর ডাকা বাংলা শাখায় আগে থেকেই কর্মচারী সেজে অবস্থান নেয় বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
মিঠু ঐ ৫ হাজার টাকা তুলে নিতে আসলে পুলিশের তাকে গ্রেপ্তার করে।
এসময় তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, ৩টি সিম কার্ড ও চাঁদার ৫০০০টাকা উদ্ধার করা হয় বলে বাগেরহাট ইনফোকে জনিয়েছেন অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির এসআই জিয়াউর রহমান।
এনজিও সমন্বয় পরিষদের জেলা সভাপতি রেহানা পারভীন লাকি জানান, আমি ভাবতে পারছি না যে, মিঠু এ কাজ করেছে। আমারা একই এলাকায় থকি। তার মা আমাদের বাসায় যান। মিঠুকে আমি ছোট দেখেছি, আদর করেছি।
সে এখন আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়ে, ফেসবুকে পরিবারের নারী সদস্যদের নগ্নছবি ছড়ানোর কথা বলে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। আমি মামলা করবো।
চাঁদা চেয়ে মুঠোফোনে হুমকির শিকার আর এক ব্যক্তি বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বাগেরহাট ইনফোকে জানান, ‘মুঠোফোনে এক ব্যক্তি আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দলীয় প্রতিপক্ষ আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মিঠু আমার পরিচিত। আমি তাকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী এবং ভালো সমাজসেবী হিসেবে চিনি। মিঠুই যে আমার কাছে চাঁদা চেয়েছে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটাই সত্যি কারণ মিঠু নিজেই এখন এ কথা স্বীকার করেছে।’
পুলিশ ও সাংবাদিকেদের কাছে মিঠু বলেন, গত বছর ভারতের পুনে সেন্ট জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ অব ইংলিশ লিটারেচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন সে। গত ২৫ আগস্ট তিনি ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। হঠাৎ এক রাতে তিনি দ্রুত টাকা রোজগারের জন্য মুঠোফোনে চাঁদা দাবির সিদ্ধান্ত নেন। এর পর তিনি পরিচিতদের কাছে চাঁদা চেয়ে ফোন করা শুরু করেন।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জিয়াউর রহমান বাগেরহাট ইনফোকে বলেন, আমাদের ধারণা সে ভারতে কোন অপরাধী গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে এই জগতে ঢুকেছে। এমনকি সে মাদকাসক্তও হতে পারে। আমরা তদন্তে দেখলাম যে, সে তার পরিচিত জনদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করার পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলো।
খুলনা ও বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা এলাকায় তার কয়েক জন পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি চাঁদা আদায় করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একজন ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, ‘প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মিঠু তার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নিষিদ্ধ চরমপন্থী সংগঠনের পরিচয়ে তিনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন তখন তার কথায় মনে হচ্ছিলো তিনি আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অনেক গোপণ কথাই জানেন।’
এবিষয়ে বাগেরহাট থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া লাভলু ও নাট্য নির্দেশক শফিক সোহাগ বিস্ময় প্রকাশ করে বাগেরহাট ইনফোকে জানান, মিঠু আমাদের সাথে ছোটবেলা থেকে কাজ করে। কিন্তু তার এই পরিচয়ের কোন কিছুই আমরা কখনো জানতে পারিনি।
আজ বিকাল ৪টা ২০মিনিটের সময় বাগেরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোল্যা নিয়ামুল হক বাগেরহাট ইনফোকে জানান, আটককৃত হরপ্রসাদ হালদার ওরফে মিঠু গত প্রায় এক/দেড় মাস ধরে বাগেরহাটের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট বিভিন্ন দাবিতে চাঁদা চেয়ে আসছিল। প্রথমিক জিজ্ঞাসা বাদে সে জানায় সাধারণ কিওরিসিটি থেকে সে কাজটি করেছে।
অধিক জিজ্ঞাসা বাদে জন্য আদালতের মাধ্যমে আর রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে বলে এসময় জনান তিনি।
০৪ অক্টোবর ২০১৩ :: নিউজ ডেস্ক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এএইচ/এসআইএইচ-নিউজ রুম/বিআই
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More