প্রচ্ছদ / লেখালেখি / ‘মানুষের মুক্তি না হলে কাব্যেরও মুক্তি হবে না‘– মোহাম্মদ রফিক (০৩)

‘মানুষের মুক্তি না হলে কাব্যেরও মুক্তি হবে না‘– মোহাম্মদ রফিক (০৩)

কবি মোহাম্মদ রফিকে সাক্ষাৎকার: দ্বিতীয় অংশের পর

mohammad-rofiqস্যার, মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর চলে গেছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। এবং বিশ্ব রাজনীতিতেও আমরা অবদান রাখতে শুরু করেছি।

মোহাম্মদ রফিক : আরও অনেক অবদানই আমাদের থাকবে। আমি তো মাকে একটা কথা বলি, তুমি যখন আমাকে এই প্রশ্নটি করেছ তখন আমি বুঝেছি, আমি যখন আইওয়াতে গেলাম, তখন আমার কাছে ব্যাপারটি স্পষ্ট হলো। বিশেষ করে লাটিন আমেরিকা বা আফ্রিকা বা অন্যান্য দেশের লেখকদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হলো। আমি বোঝালাম, তাদের বললাম, তারাও জানতে আগ্রহী হলো, আমি তখন বুঝলাম, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের এত উৎসাহ কেন! আমরা সাধারণত বলে থাকি, আমাদের দেশে গ্যাস তেল পাওয়া যায়, এসব তাঁরা দখল করতে চায়। কথাটা কিছুটা হলেও সত্য। তুমি দেখ, পৃথিবীর এই যে মানচিত্র, এই মানচিত্র তৈরি করেছেন কারা?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: ব্রিটিশরা?

মোহাম্মদ রফিক : শুধু ব্রিটিশরাই নয়, পশ্চিমারাও। আমরা যাদের পশ্চিমা বলি, আমাদের দেশের সীমারেখা নিয়ে যাদের সমস্যা, আবার ভারতের সাথে চীনের বা চীনের সাথে অন্যান্য দেশের। তেমনি লাতিন আমেরিকায়ও সীমান্ত সমস্যা আছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ সমস্যা লাগিয়ে রেখেছে। এখানে শুধু বৃটিশরা একা না, টোটাল পশ্চিমাজগৎ। তার সাথে যুক্ত আমেরিকাও। এখন আমাদের এখানে কারা সমস্যা তৈরি করেছেন, লাইবেরিয়ায় কারা তৈরি করেছে, ওরা। আর বাংলাদেশ তৈরি করেছে কারা! স্বাধীন করেছে কারা?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: আমরা।

মোহাম্মদ রফিক : তবে এটা ঠিক যে আমরা ভারতের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি, রাশিয়ার কাছে সাহায্য নিয়েছি। আর আমেরিকা যখন স্বাধীন হয় তখন তারা কি ফ্রান্সের কাছে সাহায্য নেয় নি? পৃথিবীর প্রত্যেক দেশই তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যদেশের সাহায্য নেয়। আমরাও নিয়েছি। এটাকে বড় করে দেখার কিচ্ছু নেই। কিন্তু আমাদেরকে স্বাধীন করেছি আমরা। এটা আমাদের আত্মশক্তির জায়গা।

এবং এই জায়গাটার কথা ওরা জানে। ওরা জানে, আমরা যদি দাঁড়াই মাথা তুলে, আমরা পৃথিবীটাকে কাঁপিয়ে দিতে পারি। শোনো, তোমাকে আমি একটা কথা বলি, যে কথা আমি আমেরিকায় গিয়ে বক্তৃতায় বলেছি, নোবেল পুরস্কার যদি কোনো সভ্যতার মানদণ্ড হয় তবে আমরা বাঙালিরা তোমাদের চেয়ে তেইশ বছর এগিয়ে আছি।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: কিভাবে?

মোহাম্মদ রফিক: আমরা বাংলাতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছি ১৯১৩ সালে, আর তোমরা (আমেরিকানরা) পেয়েছ ১৯৩৬ সালে। সো, ডোন্ট ফরগেট ইট। আমি বলি, আজ রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারটি শুধু রবীন্দ্রনাথের জন্যই সৌভাগ্য বহন করে না, সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এই সৌভাগ্য বহন করে নিয়ে এসেছে। এটা কেউ ভাবে না! রবীন্দ্রনাথকে নোবেল দেওয়ার পেছনে বৃটিশ শক্তি কাজ করেছে। আর ওরা ভেবেছিল রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর, জমিদার, আমরা ওকে পার্মানেন্টলি আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যার প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করল এবং চিঠিটি লিখল প্রত্যাখ্যানের, সেটা এক কথায় অসাধারণ ছিল। ওদের মুখের মধ্যে থুতু মেরে দিল।

তখন তারা বুঝল, আরে, এটা কী হলো! তারপরের কাজটা করল সুভাষবসু। সুভাষবসু যখন তাদের চাকরি ছেড়ে লাথি মেরে চলে আসলো, তখন তারা বুঝল, খবরদার, বাঙালিকে তো একসাথে রাখা যাবে না। রাখলে ওরা আমাদের উপরই খবরদারী করবে। সো, ডি ভাইড অ্যান্ড রুল। তুমি দেখবে ওরা একই ভাবে চেষ্টা করেছে রবীন্দ্রনাথ যেন নাইট পায়, আবার জগদীশ চন্দ্র বসু যেন নোবেল না পায়।

তারা বুঝেছে,


সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার চেয়ে বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন যদি জগদীশ চন্দ্র বসু নোবেল পেয়ে যেতেন, তাহলে এর প্রভাব বাঙালি জাতির উপর অন্যরকমভাবে পড়ত। তখন হয়তো হিন্দু মুসলমান রায়ট বা ৬৫ এর ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ সম্ভব হতো না।


ধরো, আমরাই ইউবিরোধী বা ইহুদীবিরোধী, ইহুদীরা যে কাণ্ড কারখানা করেছে, তাতে আমরা তাদের বিরোধী না হয়ে পারি না। কিন্তু আমরা চাই ইহুদীরা তাদের অধিকার পাক। অবশ্যই পাক। সেটা কারো প্রতিশ্রুতির ভেতর দিয়ে না, তারা নিজেদের যোগ্যতায় সেটা পাক। তবে ইহুদীরা পৃথিবীতে চেতনার দিক দিয়ে বিরাট শক্তি। মানুষ শুধু অস্ত্র দিয়েই পৃথিবী শাসন করে না। এক অর্থে ইহুদীরাই পৃথিবী শাসন করছে। কারণ আমেরিকা যে খবরদারী করে সেটা তৈরি করেছে কারা!

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: ইংরেজরা।

মোহাম্মদ রফিক : 12825168_1096701337037076_279384043_nএকটা কথা, আজ যদি বাংলা অবিভক্ত থাকত, তাহলে দেখতে এ অঞ্চলের শুধু নয়, পৃথিবীর চিন্তা চেতনার সর্বক্ষেত্রে অধিকারটা বাঙালিরই থাকত। এবং সেটাকে ভাঙার জন্য ১৯১৯ সাল থেকে ইংরেজরা উঠে পড়ে লেগেছে। সেটা তারা বাস্তবায়ন করেছে।


তুমি তাকালে দেখবে ১৯৩৬ এর আগে হিন্দু মুসলমান মারামারি হয়েছে? মারামারি তো অন্য বিষয়, জমি নিয়ে মারামারি বা সীমানা নিয়ে মারামারি, কিন্তু যাকে বলে সাম্প্রদায়িক দাঙা, সেটা কিন্তু ৩৬ এর আগে এ অঞ্চলে হয় নি। এটা ইংরেজের একটা প্লান। শুধু ইংরেজরা বলব না, সমস্ত উপনিবেশবাদীরা চক্রান্ত করেছে। তারা বুঝাতে চেয়েছে আমরা অসভ্য, আমরা অমুক-তমুক, আমরা এটা জানি না, সেটা জানি না। তারা সব জানে।


শিমুল সালাহ্উদ্দিন: স্যার, অরুণ সেনের মতো লোক আপনার কবিতা নিয়ে অসাধারণ দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন। সনৎ কুমার সাহা, গত বছর একুশে পদক পেলেন, নিয়মিতই লিখেছেন আপনার উপর। তথাপি, আমাদের সমালোচনা সাহিত্যে তো, আসলে সংকট আছে, তার মধ্যে এই পাওয়াগুলি কি ভাবে দেখেন?

মোহাম্মদ রফিক : তখন তো তোমাকে বললাম, ইদানিং শুনছি যে সুধীর চক্রবর্তী লিখেছেন। আমি লেখাটা হাতে পাই নি। হাতে পেলে তোমাকে বলতাম। সেখানে তিনি বলেছেন, আমি শুনেছি ঐ পত্রিকায়, আমার কপিলা উনার ভালো লেগেছে। আমার কিন্তু ঐ ব্যাপারে কোনো দুঃখ নেই। আমি বাংলা সাহিত্যের দুজন প্রধান লেখক, অরুণমিত্র তারপর আবদুল কাদীর সাহেব, তাদের প্রশংসা পেয়েছি। আমাকে মুখোমুখি বলেছেন, অন্যের সামনে বলেছেন।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: জ্বি স্যার। অন্য একটা প্রসঙ্গে যাই। সেটা হলো আপনি তো বললেনই স্যার, বাংলা কবিতায় আপনি হলেন রবীন্দ্রবাদী।

মোহাম্মদ রফিক : রবীন্দ্রবাদী মানে ঐ বলয়ের।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন : ঐ বলয়টা স্যার কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মোহাম্মদ রফিক : বৈষ্ণব পদাবলী বা গীতিকা বা আমার ইতিহাস হলো বাঙলার সংস্কৃতি। বাঙলার যে আবহমান সংস্কৃতি লালন এবং যার ভিতরে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। তুমি দেখো, এই দক্ষিণাঞ্চলই কিন্তু সেই অর্থে, এক অর্থে বাংলার সংস্কৃতিকে তৈরি করেছে। তুমি মাইকেল বলো, রবীন্দ্রনাথ বলো, লালন বলো এরা সবাই এখান থেকে উঠে এসেছেন। হাসন রাজা বলো, সবাই কিন্তু এখান থেকে উঠে আসছে।

দক্ষিণবাংলার জল, মাটি হাওয়ার বাংলা। আমি চেয়েছি, আমি মনে করি, আর্টারী, এই রক্তনালী যাকে বলে।

বাঙলার রক্তনালী হচ্ছে বাঙলার নদী, বাঙলার জল এবং আমি চেয়েছি যে আমার কবিতায় যেন শেষ পর্যন্ত জল কথা বলে, নদী কথা বলে।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: হাওয়া কথা বলে!

মোহাম্মদ রফিক : হাওয়া কথা বলে, মাঝি কথা বলে, পাখি কথা বলে । হাঁ, আমি এটাই চেয়েছি এবং আমি এখনও যদ্দিন আমি বেঁচে থাকব, এটাই চেষ্টা করে যাব।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: সংলাপের কিছু ব্যবহার আপনি কবিতায় খুব সফলভাবে করেছেন এবং সেটা এমন একটা সময়, ষাটের দশক মানে হলো, ষাটের দশক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কবি আমাদের সাহিত্যে দাঁড়িয়েছেন নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে। আপনি স্যার সংলাপের এক ধরনের মজার ব্যবহার করেছেন, যেমন কপিলা বাগাওদিয়াকিংবা রূপকথা কিংবদন্তির মধ্য দিয়ে যেগুলো আছে। যেমন—প্রথম ও দ্বিতীয় বইয়ের মধ্যেও সেই জিনিসগুলো আছে। যেটা জানতে চাই স্যার, ষাটের দশকের পরে সত্তর, আশি, নব্বই, এই সময়ে আমরা আসলে সেই রকম শক্তিমান কবি আর সেভাবে পাচ্ছি না। ষাটের দশকের মধ্যে আসলে কি এমন জাদু ছিল যে আপনারা এতগুলো মানুষ আলাদাভাবে দাঁড়ালেন।

মোহাম্মদ রফিক : সেই কথা বলতে গেলে তুমি সারা পৃথিবীর দিকে তাকাও। সারা পৃথিবীতে কিন্তু ষাটের দশক একটা সাড়া জাগানো সময়। তোমাকে যদি আমি জিজ্ঞেস করি, তুমি গত পঞ্চাশ বছরে একজন দার্শনিকের নাম বলোতো, যার প্রভাব সারা পৃথিবীতে পড়েছে?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: জাঁ জাঁক রুশো, জাঁ পলসার্ত্রে।

মোহাম্মদ রফিক : না না, গত পঞ্চাশ বছরে তৈরি হয়েছে?

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: স্যার, গত পঞ্চাশ বছরে তৈরি হয়েছেন এমন দার্শনিক তো স্যার ফ্যুকো, দেরিদা।

মোহাম্মদ রফিক : কিন্তু আজকে তুমি ভাবতে পারবে না, আমাদের সময়ে, তখনকার ইসে, এই ধরো সার্ত্রে, কামু প্রবল প্রতাপ নিয়ে এলেন। শুধু তাই না আমাদের অঞ্চলেও ধরো, এবং ষাটের দশকে সারা পৃথিবী তারা শাসন করেছে। যেমন সুয়েকার্নো, যেমন জওহর লাল নেহেরু, আজকের অমিতাভের মতো নায়ক আর আছে? হাঁ, ষাটের দশকে ফিদেল ক্যাস্ট্রো পৃথিবীতে এসেছে, আমাদের বঙ্গবন্ধুর উত্থান হয়েছে। এইসব ঘটনা তো সব মিলিয়ে ষাটের দশক তৈরি হয়েছে।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: বটেই কিন্তু স্যার—

মোহাম্মদ রফিক : তারপরে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে। মনে রেখ

কোনো কবি কিন্তু নিজে নিজে তৈরি হয় না, কবি হয়তো একটা ব্যক্তিগত প্রতিভার স্ফুরণ। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত স্ফুরণটা কিন্তু নিজে নিজে খুব একটা ঘটে না। যতটা তার সমাজ বা আশপাশ তৈরি করে। একটা বলয় প্রয়োজন হয়, এই বলয়টা হারিয়ে যাচ্ছে ইদানিং।

তা তুমি কি করে আশা করো যে, এখনও একজন লোক শুধুমাত্র নিজের ইসের বলে একটা বিরাট কাজ করে ফেলবে? সেটা সম্ভব না।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: স্যার, আমি মনে করি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এবং আহসান হাবীব এদের একটা প্রভাব আপনাদের মধ্যে মানে ষাটের দশকের কবিদের মধ্যে ছিল।

মোহাম্মদ রফিক : না। এই কথাটা আমি মোটেও মানতে রাজি না। ঐভাবে না।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: সম্পাদনার প্রভাব।

মোহাম্মদ রফিক : আমাদের সময় শ্রেষ্ঠ সম্পাদক ছিলেন সিকানদার আবু জাফর। তুমি এই নামটা বলতে ভুলে গেছ।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: হাঁ আমি বলতে ভুলে গেছি। স্যরি স্যার।

মোহাম্মদ রফিক : হাঁ এবং যদি লেখক তৈরি করে থাকেন সেইটা একমাত্র সিকানদার আবু জাফর ভাই। সায়ীদ সাহেব যেটা করেছেন, সায়ীদ সাহেব সম্পর্কে খুব একটা উচ্চ ধারণা আমার নেই। আমি সায়ীদ সাহেবের ছাত্র। তিনি কিন্তু রাজনৈতিকভাবে খুব প্রতিক্রিয়াশীল লোক। এবং তিনি ছাত্র জীবনে মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ওঁ যখন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক হয়ে যায়, তখনও গিয়ে সরাসরিভাবে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। আমি যখন ভিপি ছাত্র ইউনিয়নের, তখন আমি তাঁকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করেছি। সুতরাং…

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: আপনার শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও?

মোহাম্মদ রফিক : শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও। কারণ তখন আমরা জীবন মরণ সংগ্রামে আইয়ুব শাহীর শাসনের বিরুদ্ধে। তখন আমাকে মার্শাল ল-এ আটকে জেলে পাঠানো হয়। এবং তুমি একটা কথা মনে রেখ, এখানে যখন আমাকে আর্মি নিয়ে গিয়েছিল—

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: এরশাদের আমলে?

মোহাম্মদ রফিক :


হাঁ, তখন আমি তাদেরকে বলেছি যে, আমাকে জোর করে বা চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাতে পারবেন না। আপনি কাগজ খুলে দেখেন, আমি যখন ছাত্র, এই দেশে মার্শাল ল কোর্টে যাদের বিচার হয়েছে তার প্রথম নাম্বার আসামি আমি।


আমার মার্শাল ল’ কোর্টে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে, ১৯৬২ সালে। হাঁ। আমার কোর্টে যিনি প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেন সে পাকিস্তান আর্মির একজন বিগ্রেডিয়ার ছিল —ওঁকে দেখলে লোকে ওঁর রুমেও ঢুকতে সাহস করতেন না। ওঁকে স্যার স্যার বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলত। সেই লোক আমাকে যখন শেষে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয় তখন পুলিশ রিপোর্ট করা হয়। আমি হচ্ছি কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার। তিনি বোধ হয় জীবনে কমিউনিস্ট দেখেন নি। তিনি বোধহয় ভাবতেন যে কমিউনিস্টরা সবসময় আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকে। তিনি তাঁর এজলাস থেকে নেমে এসেছেন এবং আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি হাফ প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমি তখন প্রথম বর্ষ অনার্সে ভর্তি হয়েছি। রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ছিল না। অনার্সটা পড়ানো হতো রাজশাহী কলেজে। আমি তখন হাফ প্যান্ট পড়ি। তিনি নেমে দেখছেন যে, হাফ প্যান্ট পড়া একটা ছেলে কমিউনিস্ট।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: হা হা হা।

মোহাম্মদ রফিক : হা হা। আমি এই কাহিনি কিন্তু ওদেরকে বলি।

শিমুল সালাহ্উদ্দিন: এই কাহিনিটায়-ই তো স্যার আসব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আপনার জীবনে। খোলা কবিতা যখন লিখা হলো, এরশাদের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে, আসলে এই বিশাল আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনে খোলা কবিতা বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। হাজার হাজার শ্রমিক জনতার সামনে আপনি কবিতা পড়েছেন। হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। এটা বোধহয় আপনার জীবনের অন্যতম বড় ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।

মোহাম্মদ রফিক : অবশ্যই। আমার খোলা কবিতা  সম্ভবত আমার সর্বাধিক প্রচারিত কবিতা। (চলবে)

এইচ/এসআই/বিআই/২৪ অক্টোবর, ২০১৬
পরের অংশ পড়তে ক্লিক করুন

About Inzamamul Haque