প্রচ্ছদ / লেখালেখি / মুক্তবাক / টাইটেল ছাড়া নোট

টাইটেল ছাড়া নোট

আমি দেখি মানুষ দুই রকমের। একদল বাস্তববাদী। আরেকদল স্বপ্নচারী। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় বিশ্বাসী যারা তারা নিয়ম শৃঙ্খলের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারেনা। এরা প্রাচীন নিয়ম-কানুনের চেয়ে ভালো কিছু থাকতে পারে এই ধারনাতেই বিশ্বাস করেনা ।

রুলস এর বাইরে কিছু করার চিন্তা কেউ করলে এরাই জীবন শেষ হয়ে গেলো, একে দিয়ে কিছু হবেনা, বেয়াদব ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ভোকাল কর্ডের কঠোর এক্সারসাইজ শুরু করে ।

এরা জীবনের একমাত্র উদ্যেশ্য বলতে বোঝে যেকোনো মূল্যে ‘’সফল’’ হওয়া। বাস্তববাদীদের জন্যে পুরো জীবন হচ্ছে যুদ্ধ। পৃথিবী হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র। জীবন হচ্ছে প্রতিযোগিতা, রেস। এরা সফলতার পিছনে ছুটতে ছুটতে অন্যদের টপকে শুধু শীর্ষে পৌছানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।

যেভাবেই হোক, ‘সেরা’ হতেই হবে। উঠতে হবে সবার উপরে। ছড়ি ঘুরাতে হবে দুনিয়ার সবার উপরে। মূলত এই তথাকথিত বাস্তববাদীরা হচ্ছে ক্ষমতালোভী ও স্বার্থান্বেষী

আরেক দল মানুষ আছে। তারা স্বপ্নচারী, স্বপ্নবাজ। এরা স্বাপ্নিক। এরা প্রচলিত নিয়ম-শৃঙ্খলকে খুব একটা পাত্তা দেয়না। এরাই বোহেমিয়ান। প্রত্যেক নীতিবান মানুষের মধ্যে একজন বোহেমিয়ান লুকিয়ে থাকে। যে নীতি মেনে চলে সে-ই নিয়ম ভাঙ্গতে পারে। যে আইন তৈরী করতে পারে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলীও সে-ই দেখাতে পারে।

একজন স্বাপ্নিক নিজের প্যাশন কে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিতে পারে। ঘুমিয়ে নয়, জেগে যে স্বপ্ন দেখে মানুষ ঘুমাতে পারে না – সেই স্বপ্ন দেখে তারা।

স্বপ্ন দেখা একটা আর্ট, একটা শিল্প। স্বপ্নের পিছনে ছোটার পিছনে যত বাধাই আসুক না কেন সব বাধাকে তুচ্ছ করে অমিত বেগে ছুটে চলা-রাই স্বাপ্নিক। সফলতা এদের কাছে এক মামূলী দৃষ্টিভ্রম মাত্র । Success এর থেকে Satisfaction যে অনেক বড় প্রাপ্তি জীবনে তা উপলব্ধি করতে গেলে স্বাপ্নিক হতে হয়।

সফলতার চুড়ান্ত শীর্ষে পৌছানোর পর একজন মানুষ শুধু দেখতে পায় অসীম শূণ্যতা। একজন চুড়ান্ত সফল মানুষ সবসময়েই একজন চরম নিঃসঙ্গ মানুষ। সফল ব্যাক্তির কোনো যোগ্য সঙ্গী থাকে না, থাকা সম্ভব না। কিভাবেই বা থাকবে ! জীবন মানেই তো তার কাছে প্রতিযোগিতা !

যারা সঙ্গী হতে পারত, প্রতিযোগিতার স্বার্থে তাদেরকে পদদলিত করে প্রবল অহংকারে, মিথ্যা আত্নাভিমানে সবার থেকে আলাদা সুউচ্চ এক পর্বতশৃঙ্গে পৌছানোর নাম ই তো সফলতা। সফলতার শীর্ষে পৌছে সবার উপর কর্তৃত্ব ফলানো হয়তো যায়, কিন্তু মনুষ্যধর্ম মানবিকতাকে বিসর্জন দিতে হয়। বিসর্জন দিতে হয় বন্ধুত্বকে।

একজন স্বাপ্নিক মানুষ জানে মানব জীবনের সত্যিকারের তাৎপর্য। হয়ত কেউ সফল হবে না। হয়ত ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা থাকবেনা স্বর্ণাক্ষরে, হয়ত স্বপ্ন পুরন হবার আগেই মৃত্যু এসে ‘’ব্যর্থ’’ করে দেবে কাউকে।

তবুও স্বপ্নের পিছনে ছোটা মানুষ পরাজয় বরন করেনা। শারীরিক মৃত্যু কখনোই একটা স্বপ্নকে মেরে ফেলতে পারেনা। যে সত্যিই স্বপ্ন দেখে, তার চলার পথে সঙ্গীর অভাব হয়না। বন্ধুত্বকে সত্যিকার ভাবে অনুভব করা সম্ভব একজন স্বাপ্নিক এর পক্ষে।

একজন স্বাপ্নিক এর মৃত্যুর পর ও তার বন্ধুরা, সঙ্গীরা থেকে যায় তার স্বপ্ন পুরন করার জন্যে। হাজার হলেও, লক্ষ্য একই না হোক,সবাই একাত্ন – এর নাম ই তো বন্ধুত্ব !

স্বপ্ন দেখতে জানা অনেক বড় গুন জীবনের জন্য। স্বপ্নের দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যে দরকার অমিত সাহস আর নিশঙ্ক চিত্তের। সহ্যশক্তির চুড়ান্ত প্রকাশ দেখাতে পারলেই সফল হওয়া যায় কিন্তু সহ্যশক্তিকে নিজের চারিত্রিক গুনাবলির অংশ না করএ নিতে পারলে স্বপ্ন ছোয়া যায়না।

তথাকথিত সমাজস্বীকৃত সফলতা নয়, নিজের লক্ষ্যে পৌছানোর অদম্য আগ্রহে স্বপ্ন দেখাই জীবন !

স্বত্ব ও দায় লেখকের…

About Mashqur Hussain