প্রচ্ছদ / খবর / এবার বাগেরহাটের ‘তিন রাজাকারে’র বিচার

এবার বাগেরহাটের ‘তিন রাজাকারে’র বিচার

সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও আকরাম হোসেন খাঁন
সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ ও আকরাম হোসেন খাঁন
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাগেরহাটের ৩ ‘রাজাকার’ এর বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এরা হলেন- আব্দুল লতিফ তালুকদার, শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেন।

আগামী ২রা ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই মামলার শুনানি শুরু হবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার (৫ নভেম্বর) এই তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর দিন ঠিক করে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটে হত্যা, গণহত্যা ও লুণ্ঠণসহ মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার জামিন চাইলেও তা নাকচ করে দিয়ে সেদিন সিরাজ মাস্টারের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আবুল আসাদকে আইনজীবী নিয়োগ দেন বিচারক।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি দেন প্রসিকিউটর সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারীকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।

ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে কচুয়া থানা পুলিশ গত ১১ জুন লতিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ১৯ জুন আকরাম হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহী থেকে। ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হন সিরাজ মাস্টার।

প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা বলছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।

খুলনার আনসার ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তারা অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের সঙ্গে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ চালায় বলে তদন্ত সংস্থার অভিযোগ।

International-Crims-Tribunalসাত অভিযোগ –

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুট এবং অগ্নিসংযোগ। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০-৫০ জন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ২: বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। ১৯৭১ সালের ২১ মে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৬০০-৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর থানার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯ জন নিরীহ নিরস্ত্র লোককে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সদর থানার চূলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কচুয়া থানার শাখারিকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জনকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। এসময় অনেক বাড়ির মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল আনুমানিক ৫টা পর্যন্ত কচুয়া থানা সদরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরস্ত্র পাঁচজনকে আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যা করা হয়।

অভিযোগ ৭: ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।

০৫ নভেম্বর ২০১৪ :: নিউজ ডেস্ক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আই হক-এনআরএডিটর/বিআই

About ইনফো ডেস্ক