প্রচ্ছদ / খবর / এবার তেল অপসারণে কচুরি চালান !

এবার তেল অপসারণে কচুরি চালান !

হারানো জিনিস ফিরে পেতে এক সময়কার গ্রাম্য বাটি চালানের কথা হয়তো সবার জানা। কোথাও কোথাও নাকি এখনও প্রচলিত রয়েছে এ পদ্ধতি।

Bagerhat-Pic-01(16-12-2014)তেমনটি না হলেও সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনায় বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে এবার কচুরিপানা চালানের মতোই এক পদ্ধতি ব্যবহার করতে যাচ্ছে বনবিভাগ।

ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার পর পূর্ব সুন্দরবনের নদী-খালের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল।

প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে এই তেল অপসারণে। পরে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনা করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।

এরপর জেলে ও স্থানীয়দের মাধ্যমে তেল সংগ্রহ করে তা কিনে নেওয়া হচ্ছিল। তবে এবার তেল অপসারণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বনবিভাগ নদী ও খালে কচুরিপানা ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বনবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শ্যালা নদী এবং সংলগ্ন ২১টি খালে তারা কচুড়িপানা ছড়িয়ে দেবে, যাতে পানিতে থাকা তেল আটকে যায়। পরে কচুরি তুলে নিয়ে এর সঙ্গে থাকা তেল সংগ্রহ করা হবে।

এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসেন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, কচুরিপানা ছড়ানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছে বনবিভাগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ পদ্ধতিতে তেল সংগ্রহে ব্যাপক সুফল আসবে।

Oil-Collection-pic-04তিনি বলেন, দেখা গেছে, নেট বা ফোম ব্যবহার করে তেল সংগ্রহের চেয়ে কচুরিপানার সঙ্গে বেশি তেল উঠছে। এ জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ শরণখোলা থেকে তিন ট্রলারে কচুড়িপানা সংগ্রহ করেছে। এগুলো চাঁদপাই রেঞ্জে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে বনের বিভিন্ন পয়েন্টে এ কচুরিপানা ছড়ানো হবে বলে জানান ওই বন কর্মকর্তা।

এছাড়া গাছগুলোর শ্বাসমূলে লেগে থাকা তেলে পানি ছিটিয়ে নদীতে ফেলে তা অপসারণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি দাবি করেন, এখন শ্যালা নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেকটা ভালো। দুর্ঘটনার পর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল ৫ পয়েন্ট, সোমবার সেখানে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং বন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, সাধারণত ফার্নেস অয়েল কোনো ভাসমান বস্তুতে জড়িয়ে ভারী হয়ে গেলে এক সময় পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ভাসমান বস্তুর সঙ্গে তেলটা বেশি লাগে।

Oil-Collection-pic-02তিনি বলেস, আমরা মনে করি আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে পানিতে ভাসমান তেল থাকবে না।

বনবিভাগের কচুড়িপানা দিয়ে তেল সংগ্রহের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় অভিহিত করে তিনি মন্তব্য করেন, এভাবে তেল তুলে ফেলাই উত্তম।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির নিয়োজিত ঠিকাদার মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তেল সংগ্রহ শুরুর পর গত চার দিনে তারা মোট ৪৮ হাজার ২০০ লিটার তেল সংগ্রহ করেছেন।

গত মঙ্গলবার (৯ জিসেম্বর) ভোরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার তেল নিয়ে ট্যাংকার এমটি সাউদার্ন স্টার-৭ অপর একটি ট্যাংকার এমটি টোটালের ধাক্কায় ডুবে যায়। এতে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাল হয়ে এ সব তেল ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে।

১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ :: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
আর/আই হক-এনআরএডিটর/বিআই

About ইনফো ডেস্ক