প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাট / কচুয়া / বেহাল সাইনবোর্ড-বগী সড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ!

বেহাল সাইনবোর্ড-বগী সড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ!

Bagerhat-Morrelgong-Road-Photo-01চলন্ত বাস হঠাৎ থামিয়ে দেবেন চালক। হেল্পার হেঁকে বলবেন ‘নাইম্যা আসেন ভাই। খানায় (গর্তে) পড়লে জানি না।’ সামনে তাকালেই সড়ক জুড়ে পানিতে টই-টম্বুর ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত।

রাত আর দিন নেই, প্রাণের তাগিদে বাধ্য হয়েই বাস থেকে নেমে আসবেন যাত্রীরা। সড়ক নামের মড়কের পথ ধরে সবাই সতর্ক হয়ে হাঁটবেন কিছুটা পথ। চালকও সতর্কতার সাথে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করবেন। তার পর আবারও যাত্রী নিয়ে হেলে-দুলে চলবে বাস।

বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-বগি ভায়া মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের নিত্য দিনের চিত্র এমন।

যাত্রীদ ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাইনবোর্ড থেকে মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার পথ চলতেই যাত্রীদের বাস থেকে নামতে হবে কয়েক বার। এমন বেহাল সড়ক পাড়ি দিয়ে বাগেরহাট থেকে মোরেলগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথ পার হতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা।

Bagerhat-Morrelgong-road-Pic-1(01-08-2015)তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে চলছে পুণ:নির্মাণ কাজ। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিদিনই এমন চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলতে চলতে হচ্ছে সড়কটি ব্যবহারকারী জেলার তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজ ফেলে রাখায় এবং নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উদাসীনতায় কারণে পরিস্থিতি এমন মারাত্মক পর্যায়ে গেছে বলে দবি ভুক্তভোগীদের।

পরিস্থিতি এখন এমন যে, নিরাপত্তার প্রশ্নে কোন সময়ে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে পারেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

মোরেলগঞ্জ এসএম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শেখ নুরুল আমিন। রোজ বাগেরহাট থেকে মোটরসাইকেল কলেজে যান তিনি। মঙ্গলবার কিছুটা পথ হেটে, কিছুটা বাস আর ভ্যানে করে কলেজে পৌঁছান তিনি।

Bagerhat-Morrelgong-Road-Photo-03কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক মো. জকির হোসেন রিয়াজ জানান, আগে মোরেলগঞ্জ থেকে খুলনা যেতে সময় লগতো দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। কিন্তু এখন রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাগেরহাট যেতেই সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা।

মোরেলগঞ্জ-বাগেরহাট রুটের লাইনম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সড়কের পিচ তুলে ফেলায় বিপদ আরো বেড়েছে। বহুস্থানে এখন শুধুই কাদামাটি ও গর্ত।

বাগেরহাট আন্তঃজেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার এ বাকি বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাগেরহাট থেকে মোরেলগঞ্জে যাত্রবাহি বাস চলছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে মটর শ্রমিক ও চালকরা এখন এ সড়কে বাস চালাতে চান না।’

এ অবস্থায় আঞ্চলিক মহাসড়কটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল স্থগিতের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

Bagerhat-Morrelgong-Road-Photo-02সওজ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায় সাইনবোর্ড- মোরেরগঞ্জ- শরণখোলা-বগি আঞ্চলিক মহাসড়কের পুণ:নির্মাণ প্রকল্প। ৫৩ কিলোমিটার সড়কটি নির্মানে প্রথমে ব্যায় ধরা হয় ৯৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরে সড়কে মাটির (চওড়া ও উঁচু করা) কাজ এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সড়কের কাজ শুরু হয়।

এর পর কয়েক দফা পূণমূল্যায়িত করে প্রকল্পটির বর্তমান ব্যায় দায়িয়েছে ১২৩ কোটি টাকা।

দুটি ব্লকে ভাগ করে সাইনবোর্ড থেকে নব্বই রশি বাসস্ট্যা- পর্যন্ত কাজ পায় এমএম বিইএল জেভি নামে একটি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নব্বই রশি থেকে বগি পর্যন্ত কাজ পায় এসটি-এমই জেভি নামে একটি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

বাগেরহাট সওজ’র তথ্য অনুযায়ী, এসটি-এমই জেভি ধারাবাহিকভাবে কাজ অব্যাহত রাখে এবং সড়কের শেষ প্রান্তের ১৯ কি: মি: কাজ তারা শেষ করেছে। এখন তাদের অংশের বাকি ১৪ কি: মি: অংশের কাজ চলছে। কিন্তু সড়কের প্রথমাংশের সাইনবোর্ড থেকে ১৯ কি: মি: কাজের জন্য নিযোজিত ঠিকাদার কাজ তুলতে ব্যার্থ হয়। এজন্য ঐ ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলসহ পুণ:দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় সড়কের এই অংশে দুর্ভোগ বেড়েছে।

Bagerhat-Pic-2(25-07-2015)morrelgongঅনুসন্ধানে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসটি-এমই জেভি কার্যাদেশ পেয়েছিলো ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল। ঐ বছরের ২০ অক্টোবরের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা ছিলো। কিন্তু তারা ব্যার্থ হলে ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু প্রতিষ্টানটি এই সময়ের মধ্যে কাজ তুলতে পারেনি।

সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী কাজ শেষ করতে ঐ প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে মোট ৫৫টি চিঠি দেয়া হয়েছিলো।

ঠিকাদারের মেয়াদ শেষ হবার প্রায় আট মাস পর ২০১৫ সালের ৮ মার্চ ঐ প্রতিষ্ঠানের সম্পন্ন করা কাজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এর পর ২৪ মার্চ তাদের কার্যাদেশ চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়। পরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে টিএসএল-এমআইএসই জেভি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু প্রকল্প ব্যায় বাড়ানোর জন্য কৌশলে টিএসএল-এমআইএসই জেভিও ধীর গতিতে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Bagerhat-Morrelgong-Road-Photo-04এ বিষয়ে বাগেরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাজেদুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নির্বাচনে কিছুটা বেশী সময় লেগে গেছে। আমরা বিধি অনুযায়ী ঐ ঠিকাদারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের প্রায় দেড় কোটি টাকা কেটে রেখেছি।

‘ঠিকাদার আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলেন কিন্তু আদালতের আদেশ সরকারের পক্ষে এসেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সড়কটির এই অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।’

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষের আশাবাদ জানিয়ে নতুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. কালাম মজুমদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, তারা কাজ শুরু প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তাদের মালামাল ও যন্ত্রপাতি পৌঁছে যাবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু করা হবে।

০৬ আগস্ট :: আহাদ উদ্দিন হায়দার,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই

About আহাদ হায়দার