আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মায়ের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হয়েছেন ছেলে। তবে ভোটাররা বলছেন, এখানে মূল লড়াইটা কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে তার ছেলের।
দীর্ঘদিন ধরে বাবা-ছেলের সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল প্রকাশ্য। এবার তা রাজনীতির মাঠে গড়ানোয় এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রাঢ়ীপাড়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দু’জন প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের ছেলে মেহেদী হাসান বাবু।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে দু’টি মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় দুই মার্চের মধ্যে ওই দুই প্রার্থীর কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ৩ মার্চ তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বাবু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে, বাবার (উপজেলা চেয়ারম্যান) সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে আমার নামে। তাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি’।
কোনো অবস্থাতেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না জানিয়ে মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, ‘প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য আমার বাবা আমাকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন। বর্তমানে আমি এলাকাছাড়া। নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতে বাবা আমার সন্তানদেরও জিম্মি করতে চেয়েছিল’।
‘২ মার্চের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আমাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমার বাবা এবং তার লোকেরা আমার সন্তানদের জিম্মি করতে পারে এমন ভয়ে আমি তাদের সরিয়ে নিয়েছি’।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মা তাসলিমা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মেহেদী হাসান বলেন, ‘মা চেয়ারম্যান হলেও মূলত পরিষদ চালান আমার বাবা। তার (বাবার) অত্যাচারে এলাকার মানুষ জিম্মি ও অতিষ্ট। তাই এর প্রতিবাদে আমি প্রার্থী হয়েছি’।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও মেহেদী হাসানের মা তাসলিমা বেগম ছেলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার বা তার বাবার কোনো যোগাযোগ নেই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য তাকে কোনো হুমকি বা চাপ দেওয়া হচ্ছেনা। তবে কোনো নিকট আত্মীয় তাকে এ বিষয়ে কোনো অনুরোধ করেছেন কী না- তা আমার জানা নেই।’
আপনার বিরুদ্ধে আপনার ছেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তসলিমা বেগম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘কি আর বলবো। সে প্রার্থী হয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দলের কাছে মনোনয়নও চায়নি সে’।
ছেলের সঙ্গে কোনো পারিবারিক দ্বন্দ্ব আছে কী না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তার বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য আছে। তবে এজন্যই ছেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছে কী না- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
২০০৯ সালে কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে এসএম মাহফুজুর রহমান রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে ইউপি নির্বাচনে তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে বাগেরহাটের ৯ উপজেলার ৭৪ ইউনিয়নের মধ্যে ২৬টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। এদের মধ্যে ১৯ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপরীতে কেউ মনোনয়নপত্র জামা দেননি।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More