প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাট / কচুয়া / আটকদের আদালতে জেএমবি সম্পৃক্ততা স্বীকার: পুলিশ

আটকদের আদালতে জেএমবি সম্পৃক্ততা স্বীকার: পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

bagerhat-jmb-arest-pic-125-10-2016বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের খলিসাখালি গ্রাম থেকে আটক চারজন আদালতের কাছে জেএমবি’তে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপর সোয়া ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগেরহাটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসিফ আকরামের আদালতে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাদের বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) গাজী ইকবাল হোসেন জানান।

তবে ঐ জবানবন্দিতে তারা কী বলেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য জানানি পুলিশ।

সোমবার গভীর রাতে খলিসাখালি গ্রামের একটি বাগান ঘেরা টিনের বাড়ি থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চার তরুণকে আটকের কথা জানায় পুলিশ।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, আটককৃতরা আরও কয়েকজনকে নিয়ে ওই বাড়িতে গোপন বৈঠক করছিলো। তারা পালানোর চেষ্টায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমাও ছোড়ে। এতে তিনি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

পরে ওই বাড়িটি এবং আটককৃতদের কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল (রিভলবার), সাতটি গুলির খোসা, পাঁচটি মোবাইল সেট ও একটি কম্পিউটর উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে আটককৃতদের জেএমবি সদস্য বলে দাবি করলেও তারা পুরানো না কী ‘নব্য জেএমবি’র নেতৃত্বে পরিচালিত, সে বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হলেও তারা এ সম্পর্কে পরে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা, অস্ত্র আইন, বিষ্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ও আইসিটি আইনে কচুয়া থানায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে।

মামলায় আটক আকাশ, হাবিবুল্লাহ, মিজানুর ও কবিরুল ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ছয়/সাত জনকে আসামী করা হয়েছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবি’র এসআই এবং মামলার বাদী গাজী ইকবাল হোসেন জানান, আটক হওয়া কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের কাকারবিল গ্রামের বেদার উদ্দিন মোল্লার ছেলে আকাশ মোল্লা ওরফে বাবু (১৯) কচুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাশ করেছেন। প্রায় দুই বছর আগে নিজ বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন তিনি।‍

পিরোজপুর সদর উপজেলার মাছিমপুর দক্ষিণ শেখপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই শেখের ছেলে হাবিবুল্লাহ শেখ (১৮) পিরোজপুরের কেয়ামুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেবেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলার সোনাখালী গ্রামের মো. আলম হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান হাওলাদার (২৬) পিরোজপুরের দূর্গাপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এ বছর দাখিল পাশ করেছেন।

নাজিরপুর উপজেলার রঘুনাথপুর খেজুরতলা গ্রামের লোকমান ফরাজীর ছেলে কবিরুল ফরাজী (২৯) পেশায় আইনজীবীর সহকারী। তিনি চার বছরেরও বেশি সময় ধরে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

‘আটককৃতদের বাগেরহাটে বড় ধরণের নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা করছিলো’ দাবি করে গাজী ইকবাল আরও বলেন, তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

তবে আটক হাবিবুল্লাহ শেখকে ১৩দিন আগে নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়েছে বলে বলে দাবি করেছেন তার পরিবার। সে এ ধরণের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি তাদের।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর জেলাসহ পাঁচটি জেলা নিয়ে জেএমবির একটি সাংগঠনিক এলাকা রয়েছে। আটক চার জেএমবি সদস্য এই সাংগঠনিক এলাকার আওতাভুক্ত।’

তিনি জানান, সোমবার রাতে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরী। উচ্চ ক্ষমতার এই বোমাগুলো ‘সকেট বোমা’ নামেও পরিচিত।

‘এ বছরের প্রথম দিকে তারা বাগেরহাট শহর সংলগ্ন দড়াটানা সেতুর নীচে পূর্ব প্রান্তে নদীর পাড়ে এ ধরণের একটি বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলো বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।’

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ