শুকনো মৌসুমে খোঁজ থাকে না, বর্ষায় তোড়জোড়
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ভৈরব নদের ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরাতন রূপসা-বাগেরহাট সড়ক। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন মুচিঘাট এলাকায় সড়কটির অর্ধেকের বেশি অংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে; বাকি অংশেও ফাটল দেখা দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
ভাঙনের আতঙ্কে আছে যাত্রাপুর ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামের কয়েক শ’ বাসিন্দা।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্র জানায়, সদর উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা পুরাতন রূপসা-বাগেরহাট সড়কটি দিয়ে জেলা সদর এবং এখান থেকে ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় যাতায়াত করেন। গেল কয়েক বছর ধরে বর্ষায় ভাঙছে ভৈরব নদের মুচিঘাট এলাকা। এরই মধ্যে সড়কের প্রায় ২৫০ মিটার পড়েছে ভাঙনের মুখে।
সড়ক ছাড়াও যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর, চাঁপাতলা, চাঁপাতলা পূর্বপাড়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়নের লাউপালা গ্রামের বসতবাড়ি, বাগানসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদে হারিয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় চরম আতঙ্কে আছে এসব এলাকার মানুষ।
ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় নদের ভাঙন চলছে। সাত-আট বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে, কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
চাঁপাতলা পূর্বপাড়ার গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ভৈরবের ভাঙনে তাঁর ঘরবাড়ি, কবরস্থান—সবই গেছে। এখন রাস্তার পাশে থাকেন। সেখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ঘরও যেকোনো সময় নদে হারিয়ে যেতে পারে।
চাঁপাতলা গ্রামের আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভাঙছে। সড়কের অর্ধেক ভেঙে যাওয়ায় গত সপ্তাহে তিন দিন এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
‘ভাঙনের আগে (পাউবো) কোন কাজ করেনা। ভাঙন শুরু পর যে ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তা আর চার-পাঁচ মাস আগে করলে এখানে ভাঙতো না।’
রহিমাবাদ গ্রামের মোটরশ্রমিক মো. আবদুল্লাহ শেখ বলেন, এ সড়কপথে মাহেন্দ্র, ইজিবাইক, পিকআপ, ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করে বছর বছর যে ভাবে কাজ করা হচ্ছে-তাকে কোন কাজে আসছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, ভৈরব নদ ভাঙতে ভাঙতে এখন সড়কের কাছে চলে এলেও নদটি আরও দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ফিট দূরে ছিলে। যাত্রাপুরের দিকে নদী ভাঙলেও অপর পাশে বারুইপাড়া ইউনিয়নের দিকে চর পড়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও ওপর পাশে জেগে ওঠা চর কেটে দেওয়ার দাবি তাদের।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, ৬ বছর আগে স্থানীয় লোকজন নিয়ে নদীর মধ্যে থাকা একটি চর কেটে স্রোতের গতি বদলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চরের চিংড়িঘেরের মালিকদের কারণে শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করেও তা বন্ধ করে দিতে হয়।
তার অভিযোগ, পাউবো এটিকে (ভাঙন) ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। বর্ষা এলে প্রতিবছর কিছু বালুর বস্তা ফেলে ও গাছ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করে। এভাবে ভাঙন রোধ সম্ভব নয়। স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা দরকার।
সেই সাথে ভাঙন টেকাতে পার্কো (বাশ দিয়ে তৈরি খাঁচা, যার মাঝে ইট দিয়ে নদীতে ফেলা হয়) ফেলা উচিৎ।
পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার বলেন, যাত্রাপুরের কাছে যে সড়কটি ভাঙছে, এটি মূলত সড়ক বিভাগের। ভৈরব নদের ভাঙন কবলিত ওই এলাকায় পাউবোর কোনো বেড়িবাঁধ বা স্থায়ী প্রকল্প নেই। তবু এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা অস্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে কাজ করছে।
‘এখানে মূলত দায়িত্ব সড়ক বিভাগের। তাদের রাস্তা তারা যদি আমাদের দিয়েও কাজ করাতে চায়; অর্থ বরাদ্দ দিলে আমারা কাজ করতে পারি।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, যাত্রাপুর বাজারের আগে ভাঙনের কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে ভাঙন প্রতিরোধ ও নদশাসন পাউবোর কাজ। তারাই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। এই কাজ তারাই করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই এলাকার রাস্তা যদি পুরো ভেঙে যায়, আমরা তাহলে পাশ দিয়ে আবার নতুন করে রাস্তা করে দেব। তবে নদভাঙন প্রতিরোধের কাজটি পাউবোকেই করতে হবে। এখানে একটি প্রতিরক্ষা বাঁধ না করলে রাস্তা নয়, পুরো জনপদ নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’
ভাঙন রোধে স্থায়ী কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কী না – এমন প্রশ্নে খুশী মোহনের ভাষ্য, কংক্রিটের ব্লক দিয়ে ওই এলাকায় একটি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য বোর্ডের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদিত হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
এইচ//এসআই/বিআই/০৯ জুলাই, ২০১৭
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More