চাঞ্চল্যকর ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খান জাহিদ হাসানকে হত্যার ২ দিন আগে রূপসায় পরপর দু’রাত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেস্তাফা কামালের বাড়ীর পিছনে অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক। আর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও তার ভাই মাসুম সহায়তা করে এ হত্যাকান্ডে।
আর এ বৈঠকে উপস্থত ছিলো কিলার আলমগীর হোসেন বাঘা ও গোলাম মোস্তফা ডালিম।রিমান্ডে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় এ তথ্য স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ফকিরহাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) হারুন অর রশীদ।
জবানবন্দিতে ঐ যুবলীগ নেতা হারুন আরও স্বীকার করেছেন জাহিদকে হত্যার জন্য কিলারদের দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান ১৫লাখ টাকার ৫লাখ টাকা তিনি নিজে এবং ১০লাখ টাকা সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী দিতে সম্মত হন।
যুবলীগ নেতা হারুন অর রশীদ তার জবানবন্দিতে বলেছেন, জাহিদ চেয়ারম্যানকে হত্যার জন্য ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত জাকির হোসেন ও তার ভাই জিল্লু দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে। ২০০৪ সালে ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ডে জাহিদ চেয়ারম্যানকে হত্যা করার জন্য বোমা হামলা চালানো হয়। বোমাটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় জাহিদের ভাগ্নে নিহত হয়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগ নেতা হারুন অর রশীদ, শেখ মোহাম্মদ আলী ও আসলাম মল্লিক ও খান জাহিদ হাসান ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে খান জাহিদ হাসান ৫ হাজার ৮০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে হারুন অর রশীদ ৪ হাজার ৮০০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়, শেখ মোহাম্মদ আলী ১হাজার ৫০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় এবং আসলাম মল্লিক ৭০০ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরদার নিয়ামত হোসেনকে সরিয়ে ফকিরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় খান জাহিদ হাসানকে। একদিকে ইউপি চেয়ারম্যান এবং অপরদিকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ায় খান জাহিদ হাসান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে জবানবন্দিতে আদলতকে বলেন যুবলীগ নেতা হারুন অর রশীদ।
জবানবন্দিতে হারুন আরও বলেন, চেয়ারম্যান জাহিদ ও তার নিজ বাড়ী সাতশৈয়া গ্রামের লোকজন মিলে ফকিরহাট বাজার ও তার আশাপাশের লোকজনদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন করায় এলাকার লোকজন চেয়ারম্যান জাহিদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়। ওই সময় এলাকার কিছু লোক হারুন অর রশীদের পক্ষে এবং কিছু লোক শেখ মোহাম্মদ আলীর পক্ষে ছিলো।
চেয়ারম্যান জাহিদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে হারুন বিরোধিতা করার কারণে সাতশৈয়া গ্রামের লোকজন নিয়ে হারুনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং তার স্ত্রী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তহুরা বেগমকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় হারুন ৩টি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে জাহিদের লোকজন পাল্টা তিনটি মামলা করে। জাহিদ চেয়ারম্যান হত্যার ২০/২৫ দিন আগে বিশ্ব রোড দিয়ে যাওয়ার সময় জিল্লু হারুনকে বলে আপনার সাথে কথা আছে। এসময় জিল্লু জানায়, চেয়ারম্যান জাহিদকে হত্যা করা হবে। সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এ বিষয়ে রাজী আছে আপনার মত কি? পরে হারুনও একমত পোষণ করে চেয়ারম্যান জাহিদকে হত্যা করার জন্য। হত্যাকারীদের ১৫ লাখ টাকায় ঠিক করা হয় জাহিদকে হত্যার জন্য
হত্যাকান্ডের আগে জিল্লুর বাড়িতে ২রাত বৈঠক করে কিলাররা। সর্বশেষ হত্যাকান্ডের ২ দিন আগে রূপসার নৈহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের বাড়ির পিছনে পর পর দুই রাত বৈঠক হয় বলে স্বীকার করেছেন হারুন। স্বীকারোক্তিতে হারুন আরও বলেছেন, রূপসার ওই বৈঠকে কিলার বাঘা, ডালিমসহ অন্যান্য আরও কয়েকজন কিলার উপস্থিত ছিলো। হত্যাকান্ডে মোস্তফা কামাল ও তার ভাই মাসুম সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি। তবে তারা সহায়তা করেছে বলে তিনি জানন।
এদিকে ৫দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের গতকাল শনিবার থেকে এজাহারভুক্ত আসামী আবুল বাসারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে বাসার স্বীকার করেছে জনৈক এনামুল হক টুলু চেয়ারম্যান জাহিদের কাছ থেকে ৭লাখ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। নতুন মডেলের একটি গাড়ী কিনে দেয়ার কথা বলে ওই টাকা নেন টুলু। কিন্তু টুলু অদ্যাবধি টাকা ও কাগজপত্র কোন কিছুই এখনো ফেরত দেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মোঃ ইলিয়াছ ফকির বাগেরহাট ইনফোকে জানান, যুবলীগ নেতা হারুন অর রশীদ ও তার শ্যালক রনির পর গতকাল থেকে শুরু হওয়া অপর আসামী আবুল বাসার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মে রূপসা উপজেলার খুলনা-মংলা মহাসড়কের আমদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন চেয়ারম্যান খান জাহিদ হাসান ও তাকে বহনকারী ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল চালক মুন্না শিকদার।এ ঘটনায় নিহত জাহিদের স্ত্রী শিরিনা আকতার বাদী হয়ে রূপসা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: সুবীর রায়, স্পেশাল নিউজ করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More