ফুলবানু
সাদা শাড়ির আঁচলে ঘোমটা চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা ফুলবানু বেগম। নিচু কণ্ঠস্বর, তীক্ষ্ণ চাউনি। উনার স্বামীর নাম ফজলু মিয়া। সংসারে এক মেয়ে- নাম চামেলী।
তিন বিঘা জমির মালিক ফজলু মিয়ার সংসারে কোন অভাব ছিল না কিন্তু চামেলীর বিয়ে নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তা ছিল পরিবারের। দুই মাস হল বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু বরপক্ষের দাবী বিয়েতে যৌতুক হিসেবে একটা মটরসাইকেল কিনে দিতে হবে। ফজলু মিয়া জমিতে ধান লাগিয়েছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে জমিতে এবার সবার ফলনই ভাল। বাতাসে ধানের শীষ দোলে আর ফজলু মিয়া স্বপ্ন দেখে মেয়ের বিয়ের।
ফসল কাটার পনেরো কি বিশ দিন বাকি থাকতেই এল এক নোটিশ- আগামী সাত দিনের মধ্যে সবার জমি স্থানীয় ভূমি অফিসকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যদিও অধিগ্রহনের আয়োজন আগে থেকেই চলছিল কিন্তু সবাই আশায় বুক বেধে ছিল শেষমেশ বুঝি এত বড় সর্বনাশ তাদের হবে না। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।
ফজলু মিয়া কিছুতেই তার জমি বুঝিয়ে দিবে না। এই নিয়ে নোটিশ দিতে আসা সরকারী লোকজনের সাথে তার তুমুল হল্লা হল। তারা ফিরে গেল। ঘটনা ঘটল এর ঠিক তিন দিন পর।
সকালে ফজলু মিয়াকে কেউ একজন এসে খবর দিল কে বা কারা যেন তার সমস্ত ধান কেটে নিয়ে গেছে। সেই সাথে নিয়ে গেছে গোয়ালের তিনটা গরু আর একটা বাছুর। ফজলু মিয়া এই শোক নিতে পারল না। সে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ছয় মাইল দূরের হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার ফজলু মিয়াকে মৃত ঘোষণা করে।
সেই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেছে। চামেলীর বিয়ে আর হয়নি। ফুলবানু এখন শহরে ঝিয়ের কাজ করে আর চামেলী গার্মেন্টসে কাজের জন্য দালাল ধরেছে।
ঘটনা বলতে বলতে ফুলবানুর গলা ধরে আসে। তার স্বরের অস্পষ্টতা মিলাতে থাকে বিলাপের টানা টানা সুরে।
>>>চাহিদার বাজারে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা ফুলবানুর বেঁচে থাকার আকুতি মূল্যহীন। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে রামপাল জনপদের প্রতিটি মানুষের জীবন সংকটে সাড়া না দিয়ে ঘরের কোণে চুপটি করে বসে থাকাটা কি মনুষ্যত্ব?
বিদ্যুতের প্রয়োজনে কিন্তু উন্নয়নের অজুহাতে, সুশিলতার ভাবগাম্ভীর্যে রামপালে…..(চলবে)
-Mowdudur Rahman
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More