বাগদা চিংড়ি চাষে নার্সারী ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; যেখানে ঘের প্রস্তুতকালীন সময়ে বা তার আগে নার্সারী প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
বাগদা চিংড়ি চাষে সংগৃহীত চিংড়ী পিএল সরাসরি ঘেরে ছাড়লে অনেক ক্ষেত্রে চিংড়ি পোনার মৃত্যুহার বেশী হয়ে থাকে। পরিবেশের তারতম্য, পিএল এর ক্লেশ/পীড়ন, পরিবহনজনিত ধকল, খাপ খাওয়ানো ঠিকমতো না হওয়া ইত্যাদি কারনে সাধারনতঃ চিংড়ি পিএল মারা যায়।
এজন্য সংগৃহীত পিএল নার্সারীতে ২০-২৫ দিন লালন পালন করে ঘেরে ছাড়া হলে পিএল এর মৃত্যুহার কমে যায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যেসব কারনে বাগদা চিংড়ির নার্সারী করা প্রয়োজন তা হল-
ঘেরের পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
পিএল এর সঠিক পরিচর্যা এবং খাবার দেয়া সহজ হয়।
পিএল বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি পায়।
পিএল সঠিক ভাবে বৃদ্ধি পায় ও সবল হয়ে উঠে।
মজুদ ঘেরে সঠিক মাত্রায় জুভেনাইল মজুদ করা যায়।
কম লবনাক্ত এলাকার ক্ষেত্রে নার্সারীতে লবন প্রয়োগ করে লবনের ঘনত্ব বাড়িয়ে পিএল মজুদ করা যায় (বাগেরহাটে কম লবনাক্ত এলাকায় ব্যাবহার হচ্ছে)।
বাগদা চিংড়ি নার্সারীর স্থান ও আকার:
ঘেরের এক কোনায় পুকুরের মত বাঁধ (ভেড়ী) দিয়ে বা ঘেরের বাইরে ঘেরের সাথে লাগানো অন্য কোন পুকুরে অথবা ঘেরের মধ্যে ক্যানেল/নালা করে নার্সারী তৈরী করা যেতে পারে।
নার্সারীর আকার আয়তকার হলে ভাল হয়।
নার্সারীর আয়তন মূল ঘেরের দশ ভাগের একভাগ হবে এবং গভীরতা হবে ৩.৫ থেকে ৪ ফুট (বড় ঘেরের ক্ষেত্রে একাধিক নার্সারি হতে পারে)।
বাগদা চিংড়ি নার্সারী প্রস্তুতকরণ ও পিএল পরিচর্যার ধাপ সমুহ:
১। নার্সারীর পাড় মেরামত।
২। পানি ঢোকানোর পূর্বে শতক প্রতি ১ কেজি পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৩। নার্সারীতে পানি থাকলে ৯.১ মাত্রার ৩০-৩৫ গ্রাম /শতাংশ হারে রোটেনন প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ অপসারণ করতে হবে।
৪। নার্সারীর তলার পচাঁ কালো কাদা অপসারণ।
৫। জৈব নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ঘন ফাঁসের নীল নেট ৬ ইঞ্চি মাটির নিচে গভীর করে ঢুকিয়ে দিয়ে নিরাপত্তামূলক বেড়া নির্মান করা আবশ্যক।
৬। পরিস্কার ও দুষন মুক্ত উৎস থেকে সুক্ষ্ম নেটের মধ্য দিয়ে ছেকে পানি সংগ্রহ করে ৩ দিন থিতিয়ে প্রতি এক ফুট পানির জন্য শতাংশে ১ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার দিতে হবে। ব্লিচিং প্রয়োগের ৩-৪দিন পর শতাংশ প্রতি ২৫০ গ্রাম হারে কৃষি চুন প্রয়োগ করলে ভাল হয়।
৭। নার্সারীতে পিএল এর জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরীর জন্য পিএল মজুদের ৪-৫ দিন পূর্বে শতাংশ প্রতি সরিষার খৈল-১০০ গ্রাম, চিটা গুড়-১০০ গ্রাম, অটো পালিশ-১০০ গ্রাম ও ইষ্ট পাউডার-১ চা চামস এর দ্রবন প্রয়োগ করতে হবে।
৮। চিংড়ীর আশ্রয়স্থল তৈরীর জন্য শতাংশ প্রতি ২-৩টি শুকনো কঞ্চির আটি বা ১-২টি শুকনো তালপাতা দিতে হবে।
৯। নার্সারীতে প্রতি শতাংশে ১০০০ টি পিসিআর পরিক্ষীত পিএল মজুদ করতে হবে।
১০। নার্সারীতে চিংড়ী পিএল মজুদ করার পর ২০-২৫ দিন নার্সিং করা হয়। এসময়ে প্রতি ১০০০ পিএল এর জন্য প্রথম ৫দিন ১০-২০ গ্রাম খাবার ও পরবর্তী প্রতি ৫ দিন পরপর আরো ১০ গ্রাম করে খাবার বর্ধিত করে নার্সারীতে প্রয়োগ করতে হবে।
১১। নার্সারী হতে মজুদ ঘেরে প্রতি শতাংশে ৪০-৫০টি হারে জুভেনাইল মজুদ করতে হবে।
ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওর্য়াল্ডফিস কর্তৃক বাস্থবায়নাধীন এ আইন প্রকল্প ২০১২ সাল হতে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় বাগদা চিংড়ী চাষের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি (এমটিটি) তে চাষীদেরকে উৎসাহিত করছে। বাগদা চিংড়ী চাষীদের মধ্যে এই প্রযুক্তির গ্রহনযোগ্যতা দিন দিন বেড়ে চলছে।
লেখকঃ
তোফায়েল হোসেন ও এবিএম শাহিদুল হক
টেকনিক্যাল স্পেশালিষ্ট, এআইএন প্রকল্প, ওর্য়াল্ডফিস – বাংলাদেশ।
মোবাইল : ০১৭১৪-০২১২২৫
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More