প্রচ্ছদ / খবর / আতঙ্কের দুই রাত

আতঙ্কের দুই রাত

Upzila-election2014বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার। আমি তখন শুয়ে পড়েছি। আ’লীগ প্রার্থী শেখ আবু সাঈদের ভাইপো সোহেলের নেতৃত্বে আ’লীগের ২০/২৫ জন আমার বাড়ি এসে ডাক দেয়।  বাড়ির অন্যরা দরজা খুলে দিয়ে তাদের বসতে বলে। আমার উঠে যেতে দেরি দেখে তারা সবাই আমার রুমে চলে আসে।

উঠতে দেরি হওয়ার জন্য আমাকে গালি দিয়ে বলে ভোটের আগের দিন এলাকা ছেড়ে চলে যাবি আর ভোটের পরে আসবি। কোথায় যাব বলে আমি তাদের কাছে জানতে চাইলে সোহেল আমার গালে থাপ্পোর মারে। এরপর মাথায় দুই আগুল ঠেকিয়ে দিয়ে বলে এই কানে ঠেকিয়ে দিয়ে চাপ দেব ওই কান দিয়ে বেরোই যাবে। তখন আরেক জনে আরেকটা ব্যাগ উচু করে বলে, ভিতর থেকে বের করলাম না। যদি ভোট কেন্দ্রে যাস তাহলে নির্বাচনের পরে এটা ব্যবহার করবো-এই বলে তারা চলে যায়।’

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ইসলামাবাদের আহম্মদ আলীর বাড়ি গিয়ে তার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

একই গ্রামের মৃত বেহান উদ্দিন শেখের ছেলে শেখ আব্দুল কাদেরের  বাড়ি গিয়েও একই ঘটনা ঘটায় আলীগের নেতাকর্মীরা। আব্দুল কাদেরের  স্ত্রী জানান, তার স্বামীর একটি চোখ অকেজো। তবু তাদের হাত থেকে সে রক্ষা পায় নি।রাতে বাড়ি এসে তারা তার স্বামীকে মারধর করে বলেছে বাড়ি ছেড়ে না গেলে নির্বাচনের পর দুই পায়ের রগ কেটে দেবে।

এ ধরনের ঘটনা শুধু এই দুই বাড়ি ঘটে নি। গত দুই দিনে বাগেরহাটের ৫ উপজেলার বিএনপি -জামায়াত ঘেসা প্রতিটি বাড়ি শসস্ত্র গিয়ে মারধর এবং হুমকি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে আলীগ নেতা কর্মীরা।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম জানান, বাগেরহাটের ৫ উপজেলার ভোটারা কয়েকটা ভয়াবহ রাত দেখেছে। আ’লীগের লোকজন শুধু বিএনপি জামায়াত নেতা-কর্মীদের  বাড়ি যাচ্ছে না; যারা বিএনপিতে ভোট দিতে  পারে, এমন যাকে মনে করছে তার বাড়ি হানা দিচেছ। বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে তারা। অথচ পুলিশ তাদের আটক না করে আহত বিএনপির নেতা কর্মীদের আটক করছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মজিদ জব্বার জানান, প্রশাসনের তরফ থেকে প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা।

এ পর্যন্ত জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক দফা সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সুফল পেয়েছন কি-না জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, সাংবাদিকার জাতির বিবেক । সাংবাদিকে কাছে মনের কথা বলে স্বস্তি পাই। কোন সুফল আসুক না আসুক দেশের মানুষ তো সাংবাদিকদের মাধ্যমে বাগেরহাটের চিত্র জানতে পারবে।

জেলা জামায়াতের সাধারন সম্পাদক এ্যাড আব্দুল অদুদ জানান, যতই হুমকি আসুক না কেন তাতে আমরা ভয় পাই না। আমাদের ভোটারদের প্রাণ থাকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবে না।

বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান বলেন, আ’লীগ সাধারন মানুষের ভোটাধিকার হরণ করছে। কেন্দ্রীয় আলীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের অস্তিত রক্ষার জন্য আ’লীগ বিরোধী ভোটাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে। গত দুই দফা নির্বাচনে ভোটরদের যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা না দেয়া হত তাহলে আলীগ অল্প কয়েকটি উপজেলায় বিজয়ী হতো।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এম আর জামিল হোসেন বলেন, আ’লীগ গনতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা কারো ভোটাধিকার হরণ করছে না। দেশের মানুষ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারো আ.লীগ সরকারকে নির্বাচিত করছে।

এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে জনগন আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।

১৪ মার্চ ২০১৪ :: আরিফ সাওন,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআই হক-নিউজ ডেস্ক/বিআই

About ইনফো ডেস্ক