প্রচ্ছদ / খবর / চূড়ান্ত পর্যায়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক নিয়োগ

চূড়ান্ত পর্যায়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক নিয়োগ

thumbnailসুন্দরবনসংলগ্ন বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরামর্শক (কনসালটেন্ট) নিয়োগ চূড়ান্তের প্রকৃয়া শুরু করেছে সরকার। পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয়দের বিরোধিতার মুখেই এগিয়ে চলা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আগামী আগামী জুলাই মাসে দরপত্র আহবান প্রায় চুড়ান্ত। এরই মধ্যে নির্মাণে পরামর্শকের কাজ পেতে ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগামী বছরের মার্চে তাপভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় শঙ্কর তাম্রকারের আশা বাদ, সবকিছু ঠিক থাকলে শুরু থেকে ৪৫ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আর ৪৮ মাসের মাথায় বাণিজ্যিকভাবে  উৎপাদনে বিআইএফপিসির যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় তার।

তার মতে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে।

বিজয় শঙ্কর তাম্রকার জানিয়েছেন, কনসালটেন্ট নিয়োগ পেতে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ব্লাক অ্যান্ড উইচ ও জার্মান প্রতিষ্ঠান ফিসনার তালিকাভূক্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হবে। কনসালটেন্সি ফার্মকে ৯০ দিন সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে তাদেরকে প্রকল্পের ডিজাইন ও সিডিউল তৈরি করতে হবে। এরপর আহ্বান করা হবে আন্তর্জাতিক দরপত্র। দরপত্রে চূড়ান্ত হলে ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজিংয়ের জন্য সময় পাবে ঠিকাদার।

আশা করা হচ্ছে, ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ আগামী মার্চে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। এতে ১.২ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন পড়বে। প্রায় সমান তালে এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও। তবে দ্বিতীয় ইউনিটটি প্রথম ইউনিট থেকে ৬ মাস পিছিয়ে থাকছে বলেও জানিয়েছেন বিজয় শঙ্কর তাম্রকার।

বিদ্যুতের দর কত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিজয় শঙ্কর তাম্রকার বলেন, দর এখনও চূড়ান্ত হয় নি। দরের বিষয়টি নির্ধারিত হবে উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কোথা থেকে কত দামে কয়লা আনা হচ্ছে আর তার পরিবহন খরচ কত পড়ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। তবে একটি যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এখানে বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্ধারণ করা হবে। প্রতি ইউনিটের মূল্য সর্বোচ্চ ৮ টাকা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন বিজয় শঙ্কর তাম্রকার।

তিনি বলেন, যেহেতু ইন্দোনেশিয়া ও উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে কয়লা পাওয়া যায় তাহলে উৎপাদন ব্যয় অনেক কমে আসবে। তখন সেভাবেই দর নির্ধারণ করা হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যের দূয়ার খুলে দিবে উল্লেখ করে বিজয় শঙ্কর তাম্রকার বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে ওই এলাকার চিত্রই বদলে যাবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক কম দামে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। ভারত এখান থেকে বিদ্যুৎ নেবে না।

Power Plantএসময় সুন্দরবনের সন্নিকটে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান নিয়ে বির্তকের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পরিবেশের বিষয়টি খবুই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছি। এখানে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। তাই এ ধরনের আশঙ্কার কারণ নেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চারপাশে ৫০ মিটার গ্রিন বেল্ট থাকছে। পরিবেশের যাতে ক্ষতিসাধন না হয়, সেজন্য সবুজ বেস্টনির মধ্যে থাকবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

বিজয় শঙ্কর তাম্রকার বলেন, কনসালটেন্ট নিয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। ৪৩২ একর জমি মাটি ভরাট শেষ হয়েছে। কমপ্যাক্ট করার কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মাটি যাতে সরে না যায় সেজন্য চারদিকে কংক্রিটের ব্লক বসানো হচ্ছে।

সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার ও সুন্দরবনের বাফার জোন থেকে চার কিলোমিটার দূরে স্থাপিত হবে কেন্দ্রটি। এজন্য বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপামারি মৌজায় ১ হাজার ৮৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শোষ হয়েছে জমি ভরাটের কাজ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন কয়লা লাগবে ১০ হাজার টনের বেশি। তবে এ কয়লা পরিবহনে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। অনিশ্চয়তা আছে দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানির ক্ষেত্রেও।

এনটিপিসি এ কোম্পানির মালিকানা ত্যাগ করতে চাইলে বাংলাদেশ সরকার তার শেয়ার কিনে নেবে। এর আগে ভারতের শর্তানুযায়ী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর এনটিপিসিকে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া কোম্পানিটির করপোরেট ট্যাক্সও মওকুফ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে রয়েছে বেশকিছু বিতর্ক। ভারতীয় গবেষণা অনুযায়ী, এ ধরনের প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ ৭০০ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার আড়াই গুণ। এছাড়া কয়লা পরিবহনের বিবেচনায় রামপাল এলাকাটি প্রকল্পের জন্য যৌক্তিক নয়। এর প্রমাণ পাওয়া যায় কানাডার ন্যাশনাল এনার্জি বোর্ড পরিচালিত এক গবেষণায়। তাতে বলা হয়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবশ্যই কয়লা খনির কাছে হতে হবে। তা না হলে এটি হতে হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে কিংবা রেললাইনের পাশে। তিনটির কোনোটির বিচারেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য সুন্দরবনসংলগ্ন রামপালকে জুতসই এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

অন্যদিকে, সুন্দরবন রক্ষায় ১০১ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির আন্দোলনও চলমান রয়েছে। বিরোধিতার মুখেই গত বছরের ৬ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যম্যে নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কনসালটেন্ট নিয়গের ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেওয়া হয়েছে। এর কাজ মনিটরিং করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটি প্রকল্পটির কাজের ধাপগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আগামী সপ্তাহেই কনসালটেন্ট নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

২৫ মার্চ ২০১৪ :: নিউজরুম এডিটর,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআই হকনিউজ ডেস্ক/বিআই

About ইনফো ডেস্ক