প্রচ্ছদ / খবর / ‘মানুষ গড়ার শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে’

‘মানুষ গড়ার শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে’

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাগেরহাট ইনফো ডটকম

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে কেবলমাত্র ‘চাকরিমুখী’ উল্লেখ করে সমাজ গঠনে ‘পাঠ্যসূচিতে মানুষ গড়ার শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এজন্য ‘শিক্ষসূচি পরিবর্তনের প্রয়োজন’ বলেও মনে করেন তিনি।

বিজয়ের মাসে বাগেরহাটে আয়োজিত বইমেলা উপলক্ষে দীর্ঘ সময় পর নিজ জেলায় আসেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার, পরিচালকসহ বহুমুখী পরিচয়ের অধিকারী সৈয়দ হাসান ইমাম।

শহরের স্বাধীনতা উদ্যানে ১০ দিনব্যাপী বইমেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কেবল চাকুরিজীবি মানে পেশার জন্য শিক্ষা, এটা বেশি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে। পেশার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ গড়ার বিষয়গুলোকে শিক্ষায় না আনলে আমাদের সমাজ ভালো থাকবে না। এর জন্য আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষসূচির পরিবর্তণ করা উচিৎ। আমাদের মানুষ হওয়ার জন্য দর্শণ পড়তে হবে, ইতিহাস পড়তে হবে। অতীতকে না জানলে আমরা ভবিষ্যত গড়তে পারবো না।’

তিনি বলেন, এক সময় এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল, গুরুমুখী। তাতে জীবনের সাথে মানুষের ঘনিষ্ঠতা ছিল। গুরুরগৃহে শিশুরা-কিশোরেরা সব থাকত। বাড়ির সমন্ত কাজ তারা শিখত এবং সঙ্গে সঙ্গে গুরুর কাছে পড়ালেখা শিখত। ইংরেজ শাসন আমালে এই যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন হলো, চাকুরিজীবি তৈরি করার জন্য। একটা পাঠ্যসূচি হলো যা পড়াশুনা করলে তারা চাকরি দিতে পারবে। তাতে মানুষ হতে পারবে এই শিক্ষাটা দেওয়া হলো না।

আড়াইশ বছর ধরে আমরা শুধু চাকরিজীবি হওয়ার শিক্ষা নিলাম। কিন্তু আমাদের দেশে বহুকাল আগে থেকে যে শিক্ষা ছিল, মানুষকে মানুষ করার শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা। সেই শিক্ষা প্রচার হয়েছিল যেমন শিক্ষার মাধ্যমে, তেমনি সংস্কৃতির মাধ্যমে।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা হাত ধরাধরি করে আমাদের দেশে চলে এসেছে হাজার হাজার বছর ধরে। যে কারণে সারা বিশ্বে এই উপমহাদেশের মানুষ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্থান হলো। কিন্তু সেই মানুষ গড়ার কাজটি শুরু হলোনা। এরপর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ হলো। আসলে মুক্তিযুদ্ধটা কিন্তু শুধু দেশ করার জন্য ছিলনা, শুধু সার্থ রক্ষার জন্য ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমাদের মানুষ করার জন্য যেই শিক্ষা প্রচলিত ছিল, সেই শিক্ষা ফিরিয়ে আনার জন্যও।

আরও পড়ুন:
পাঠক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর বাগেরহাটের বইমেলা
বাগেরহাটে বিজয় উৎসব ও বইমেলা শুরু
উচ্ছ্বাসে মাতল শিক্ষার্থীরা

বইমেলার পাশাপাশি মানুষ গড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সকলকে সেই উদ্যোগে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বই বড়তে হবে এবং ভালো বই পড়তে হবে। যে বই মানুষকে মানুষ তৈরি করতে শেখায়, মানুষ ও পৃথিবীকে ভালোবাসতে শেখায় আমাদের এমন বই পড়তে হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, সরকারি পিসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সাখিলুর রহমান, হাসান ইমামের সহধর্মিনী নৃত্যশিল্পি ও অভিনেত্রী লায়লা হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ আফজাল, শিক্ষাবিদ প্রফেসার মোজাফ্ফর হোসেন প্রমুখ।

‘এসো বিজয় আনন্দে, বইমেলা প্রাঙ্গণে’ প্রতিপাদ্যে চলতি মাসের ২২ ডিসেম্বর বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন ১০ দিনব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করে। প্রতিদিনই মেলায় ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাংস্কুতিক সংগঠনকে পুরস্কৃত করা হয়।

এসআই/আইএইচ/বিআই/৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ