প্রচ্ছদ / খবর / দস্যু আতংকে শুটকি পল্লীর ২০হাজার জেলে

দস্যু আতংকে শুটকি পল্লীর ২০হাজার জেলে

বঙ্গোপসাগর উপকুলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ ১৪ টি চরে ৫ মাস ব্যাপি শুটকি আহরন মৌসুমে দস্যু আতংকে শুটকি পল্লীর ২০হাজার জেলে।
Shutki-sijonমঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের শুটকি মৌসুম। ইতিমধ্যে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারর্মিট নিয়ে ডিপো মালিক, বহরদারসহ প্রায় ১৫/২০ হাজার জেলে মংলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কোস্টগার্ডের পাহারায় গন্তব্যে পৌছেছে।
বঙ্গোপসাগরসহ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে কমপক্ষ্যে ৭টি বনদস্যু বাহিনীর মুক্তিপনের দাবীতে জেলে ও বনজীবীদের অপহরন বানিজ্যের কারনে ভয়ে আতংকিত শুটকি পল্লীর এসব জেলে, বহরদার ও ডিপো মালিকরা। সুন্দরবনের বনদস্যুদের হাত থেকে রক্ষায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল ছাড়াও খোয়াজ খিজির (রা) ও গাজী কালুর নামে শিরনি বিতরন করেছে জেলে মাহাজনরা। এ খবর নিশ্চিত করেছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরন ও শুটকি  মৌসুমকে ঘিরে এবছর প্রায় ২০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিসকিলা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া , মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালী চরে। সুন্দরবন অভ্যান্তরে কমপক্ষে ১৫ টি মৎস্য আহরন, প্রক্রিয়াকরন ও বাজারজাতকরন কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলে পল্লী।
দুবলা চর জেলে পল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকী তৈরির জন্য প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায়  বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত ওয়ারী মাছ গুলো শুটকী করে থাকে।
এ পল্লীতে মূলত জেলেদের মৎস্য আহরন ও শুটকি প্রক্রিয়াকরনের ওপর ভিত্তি করেই বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। গত বছর এ খাত থেকে সুন্দরবন বন বিভাগ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। এ মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকুলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরাঞ্চালে সমবেত হয়েছে। দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া মধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বনদস্যুদের উৎপাত আশংকার মধ্যেও জীবন জীবীকার তাগিদে সাগর পাড়ের চরাঞ্চালে পৌছেছে এসব হত দরিদ্র জেলেরা।
জেলে ও বহরদারদের সূত্রে জানা গেছে, এবছরও সমুদ্রগামী জেলেদের মধ্যে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি বনবিভাগের হয়রানী ও বনদস্যু গ্রুপগুলোরে উৎপাত-আতংক রয়েই গেছে। সুন্দরবনে বনদস্যুদের হামলা ও আক্রমন থেকে  জেলেদের  জান-মাল রক্ষায় গত বছররে ন্যায় এবারও বনবিভাগ, কোষ্টগার্ড  ও আইনশৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ দাবী করেছে।
কোস্টগার্ডও বনদস্যুদের দমনে সুন্দরবনসহ উপকুলে বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গত তিনদিন ধরে চাদঁপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন ষ্টেশনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও বনরক্ষিসহ স্থানীয় ক্ষমতাশীন দলের কতিপয় ক্যাডার মিলে দুবলার শুটকি পল্লীতে জেলেদের নিরাপদে পৌছে দেয়ার নাম করে নৌকাপ্রতি ৩শ’ থেকে ৫শ’টাকা পর্যন্ত আদায় করছে বলে জেলেদের কাছ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট ইনফোকে জানান, চলতি শুটকি মৌসুমে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগের প্রতিটি টহল ক্যাম্পকে সতর্ক থাকার জন্য ইতি মধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জেলেদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ে বিষয়টি প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি জানান, ইতি মধ্যেই গত সপ্তাহ থেকে সুন্দরবনের শুটকি পল্লীতগামী জেলে, বহরদার ও ডিপো মালিকদের বনে প্রবেশ ও থাকার পাস-পারমিট দেয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে  দূর্নীতি ও অনিয়ম রোধে চলতি  মৌসুমের শুরুতেই নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে সুন্দরবন বন বিভাগ। দুবলার চরে জেলে পল্লী ফরেষ্ট অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বন বিভাগের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের।
ডিএফও বলেন, চলতি মৌসুমে বড় ধরনের কোন  প্রাকৃতিক দূর্যোগ না  হলে রাজস্ব আয় গত শুটকি মৌসুমের তুলনায় ২০ লাখ বেড়ে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। গড়ে শুটকি মাছের প্রকার ভেদে কুইন্টাল প্রতি ৫’শ টাকা হারে বন বিভাগ রাজস্ব আদায় করে থাকে। গত বছর ১৫ জন ডিপো মালিকসহ প্রায় ১৫ হাজার জেলে বহরদার শুটকি মৌসুমে সুন্দরবনে পাশ-পারর্মিট নিয়ে গিয়েছিল। এবছর এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানন তিনি।
জানা গেছে, ১৫ অক্টোবর থেকে সুন্দবনের শুটকি আহরন মৌসুম শুরু হলেও চলবে আগামী ফেব্রুয়ারী’১৪ পর্যন্ত। তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকলে ডিপো মালিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বন বিভাগ এ পল্লীর মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়িয়ে থাকে।
সুন্দরবনের দুবলা ফিস্যারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) জিয়া উদ্দিন বাগেরহাট ইনফোকে জানান, সমুদ্রে মৎস্য আহরন ও শুটকি  মৌসুমকে ঘিরে এবছরও ২০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরসহ শুটকি আহরন পল্লী গুলোতে।
তিনি জানান, বনদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ করা গেলে সুন্দরবনের শুটকি খাত থেকে প্রতি বছর সরকার ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারে। গড়ে প্রতি বছর শুটকি মৌসুমে বনদস্যুরা জেলেদের মুক্তিপনের দাবীতে অপহরন করে প্রায় ২০ কোটি টাকা মুক্তিপন আদায় করছে বলে এসম তিনি দাবী করেন।
১৪ অক্টোবর ২০১৩ :: আহসানুল করিম,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এসআইএইচ-নিউজ ডেস্ক/বিআই

About ইনফো ডেস্ক