• সুব্রত কুমার মুখার্জী
অবিনাশ বাবু সরকারি কর্মচারি। চাকুরি জীবনে উন্নতি করতে না পারলেও ব্যাক্তিগত জীবনে সফল। তিন সন্তানের জনক অবিনাশ। সন্তানরাও লেখাপড়ায় ভাল। অবিনাশ বাবু বুদ্ধি করে বেশ অল্প টাকায় শহরের পাশে কয়েক কাঠা জমি কেনেন। জমি কেনার পর প্রতিবেশী বন্ধু, বান্ধব সবাই বলে অবিনাশ নাকি পাগল।
ঐ ডোবা জায়গা কেউ কেনে। ধানও হয় না। মাছ হলেও তা ধরা সম্ভব নয়। কালের চাকা ঘুরতে ঘুরতে অবিনাশের চাকরিও শেষের পথে এসময় অনেক পরিবর্তন হল। সরকারি অফিসগুলো শহরের বাইরে আনা হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে অবিনাশের জমির এলাকায় জেলখানা তৈরী হল। প্রথম দিকে সে ভেবেছিল হয়ত সরকার নিয়ে নেবে। কিন্তু অবিনাশের জমি পাশের জমিটি পর্যন্ত সরকার অধিগ্রহন করল। অবিনাশ হাফ ছেড়ে বাঁচল।
অবসরের টাকা দিকে একটা মাথা গোজার ঠাই করার জন্য মরিয়া অবিনাশ। অনেক কষ্ট করে বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার স্যার দিয়ে একটা ছোট বাড়ির ডিজাইন করালেন। কাজের শুরুতেই রাস্তা। পাশের জমির মালিকের সাথে আলোচনা করে অবিনাশ রাস্তার ডিজাইন করলেন। ভাল রাস্তা হলে বাড়ি করার পর ভাড়াও দেওয়া যাবে।
কাজ শুরু হল। তদারকি পুরো পরিবার। সেদিন শরীর খারাপ থাকায় অবিনাশ বাবু কাজের ধারে যাননি। ছোট ছেলে কলেজে পরে। সাথে আবার একটু লেখালেখি করে। শহরে সাংবাদিক হিসাবে বেশ নামও আছে। সে কাজের তদারকি করছে। কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন কাজের কাছে যেতে হবে। পুলিশ নাকি কাজে বাঁধা দিয়েছে।
অবিনাশ বাবু গিয়ে দেখেন তার ছেলের সাথে সহকারী জেলারের সাথে বাক বিতন্ডা হয়েছে। জেলের পাশ থেকে রাস্তা করা যাবে না। তার ছেলে নাকি জানতে চেয়েছিল তাহলে পিছনের জমির লোকেরা যাবে কি করে? সাংবাদিক পরিচয়ের কারনে পুলিশ তার ছেলেকে হাত কড়া পরায়নি তবে আর তর্ক করলে নাকি ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে জেল দিয়ে দেবে বলেছে।
অবিনাশ জেলারের সাথে দেখা করলে তার সেই একই কথা কিভাবে যাবেন জানি না তবে জেলের পাশ থেকে রাস্তা করা যাবে না। এটা নাকি আইন। সরকারের অবসর প্রাপ্ত কর্মচারি এখন বিভিন্ন অফিসের দ্বারস্থ সবার একই কথা। অবিনাশ ভূমি হুকুম কর্মকর্তা তার জমিটা সরকারি করার জন্য আবেদন জানালে তাও নাকি করা যাবে না। অবিনাশ তার জমির সামনে জমিটি বিক্রয় হবে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। এখন তিনি তার প্রতিবেশীর সাথে একমত যে সে একটা পাগল। এই জমিটা কিনে নিজে শুধু নয় পরিবার ধরেই বিপর্যস্ত।
জমি কেনার জন্য আজ পর্যন্ত কেউ আসে না। জমিটি জলাভূমি। প্রত্যেক বছর বর্ষার পানি কমলে সবাই মাছ ধরতে যায়। অবিনাশ পাড়ে বসে দেখেন। এবার তেমন মাছ হল না।
এসআইএইচ/বিআই/৬ নভেম্বর, ২০১৬
Bagerhat Info Largest Bagerhat Online Portal for Latest News, Blog, Informations & Many More