প্রচ্ছদ / লেখালেখি / শিল্প-সাহিত্য / গল্প / আসমান কিংবা ঘোর | সুরাইয়া হেনা

আসমান কিংবা ঘোর | সুরাইয়া হেনা

আসমান রংয়া শাড়িখান পুরানো জিনিসপত্রের আলমারিতে পাইছিলাম। দাদিজানের শাড়ি হওয়ার কথা। আম্মারে না কইয়াই ঘরে আইনা রাখলাম শাড়িখান। রাইতে একবার তেনারে বলতে চাইয়াও বললাম না। কিছু কইয়া লাভ আছে তারে! তবুও ইচ্ছা করে কই। গল্প করি। অনেক অনেক গল্প। কি আর করুম! আমারে তো আর সইহ্য হয়না তার! কারেই বা সইহ্য করতে পারে! বুকের মইধ্যে নিঃশ্বাস জইমা ভারী হয় আমার। তাড়াইতে পারিনা।

.
ম্যাঘলা আকাশ দেইখা রাইতটা পাড় করলাম। ভোরের আলো ফোটার আগেই গিয়া পা ভিজাইলাম পুকুরে। কেমন এক অস্থিরতা! এই বাড়ির মানুষগুলা বুঝবো কোনোদিন? কে জানে! এই নিয়া ভাবলাম না খুব বেশি আর। ফটফটাইয়া নাইমা গেলাম পানিতে। একের পর এক ডুব দিলাম।তারপর দৌড়াইয়া পুরান ঘরে ঢুকলাম। ভেজা গায়েই বইসা রইলাম অনেকক্ষণ। কান্দন আহে আমার। দম বন্ধ লাগে। কি দোষ করছিলাম আমি! এমন একটা মানুষই কেন!
.
দূরে কোনো এক অচিন পাখি ডাকতাছে গলা ছাইড়া। কষ্ট নাকি ওর খুব, আমার মতন! আসমান রংয়া শাড়িখান কারো অনুমতি ছাড়াই গায়ে জরাইলাম। কি করবো! ডরাইয়া কাম নাই কাউরে।ভিজা চুল দুই হাতে নাড়াইতে নাড়াইতে ঢুকলাম ঘরে। সে তখনও ঘুমের মইধ্যে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সাজনের জিনিসপত্তর রাখা বাক্সটা বাইর করলাম বহুদিন পর। আমার বড়ই সাজতে মন চায়। চোখে গাঢ় কইরা কাজল আকুঁম, ঠোঁটে চকচইকা রং, শক্তপোক্ত খোঁপা কইরা একগাদা কৃষ্ণচূড়া গুজুম। আর সে! মুচকি হাইসা কপালের মাজখানে একখান টিপ বসাইয়া দিবে। লজ্জায় লাল হইয়া তার বুকের মইধ্যে মুখ লুকামু। স্বপ্ন!আহারে স্বপ্ন!

ভাবতে ভাবতেই বেখেয়ালে বাক্সটা পইড়া গেলো হাত থিকা। ভয়ে দুই পা পিছাইলাম। মানুষটার ঘুম ভাঙ্গলো বুঝি! বরাবর চাইয়া থাকা আয়নাডার দিকে চোখ আটকাইলো। আসমান রংয়া শাড়ি জরাইন্ন্যা এলোকেশী অষ্টাদশীর চোখে প্রেম নাই, স্বপ্ন নাই।অস্থিরতা খালি, কেমন ব্যাখ্যাহীন এক অস্থিরতা!

মানুষটা হরবরাইয়া উইঠা বসলো। আমি পিছাইলাম আরো কিছুটা। সে একবার, দুইবার এমনে বহুবার পলক ফেইলা তাকাইলো আমার দিকে। নতুন চাহুনী তার। রাগ নাই, ক্ষোভ নাই। কেমন জানি! আমি ভয় পাইলাম না। আজকে আর তারে ভয়ংকর লাগতাছে না কেন জানি। তাকাইয়াই থাকলাম। সে হাত নাড়াইলো। এমন ভঙ্গি! যেনো দূর থিকাই ছুঁইলো আমারে! চোখ পিটপিটাইয়া আবার তাকাইলো। কেমন লজ্জা লাগতাছে আমার!

সে টাইনা টাইনা কইলো “ঘরের ভিত্রে আসমান ঢুকলো কেমনে? আসমান তো দূরে থাকে, এতো কাছে কেন? হাত বাড়াইলেই ধরা যায় এই আসমান। আসমানডা কি আরো কাছে আইবো? মেঘের মইধ্যে ডুব দিতাম!” তার কথা শুইনা আমি পিছাইলাম আরো দুই পা। এই মানুষটারে এতোদিন দেখি নাই আমি। অচিন মানুষ। মানুষটার চোখে আসমান আছে। নীল আছে। প্রেমও। আবার ঘোর! আমার ইচ্ছা করলো দৌড়াইয়া কাছে যাই মানুষটার। দুই হাতে ছুঁইয়া দেখি। এক্ষুনি খুইলা দেই খাটের সাথে তার দুই পায়ে বান্ধা লোহার শিকল…

এসআইএইচ/বিআই/০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

About সুরাইয়া হেনা