প্রচ্ছদ / খবর / আজও শুরু হয়নি বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম

আজও শুরু হয়নি বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম

Bagerhat-Pasport-Office-Pic -(1)উদ্বোধনের দুই বছরেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাগেরহাটের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।

অত্যাধুনিক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি তৈরির লক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শহরের খারদ্বার এলাকায় ব্যাক্তি মালিকানাধীন একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস’ উদ্বোধন করা হয় ।

কিন্তু উদ্বোধনের দির্ঘ্য সময় পার হলেও জনগনের সেবা প্রদানে কোন কাজেই আসছেনা অফিসটি। তবে, বাড়ি ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন প্রদানসহ নানা খাতে মাসে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা ব্যায় হচ্ছে সরকারের।

সরেজমিনে অফিসটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এমআরপি তৈরীর যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় আসবাব, লোকবল সবই আছে। কিন্তু নেই শুধু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত সংযোগ।

আর এতেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাগেরহাটে বহুকাঙ্খিত জেলা পাসপোর্ট অফিস ও যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রকল্পের (এমআরপি) ভবিষ্যত।

এদিকে, বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের কোনো কার্যক্রম না থাকায় জেলার বিদেশগামী মানুষকে পাসপোর্ট করার জন্য যেতে হয় খুলনায়। নিয়ম অনুযায়ী যিনি পাসপোর্ট করবেন তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দেবেন। তারপর ওই অফিস থেকে একটি তারিখ দেওয়া হবে পরবর্তিতে ছবি তোলা ও আংগুলের ছাপ নেয়ার জন্য।

Bagerhat-Pasport-Office-Pic -(2)পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাসপোর্টটি ডেলিভারীর দিনও গ্রহণকারীকে সশরীরে যেতে হবে ওই অফিসে। এভাবে একজন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৩ বার সকল কাজ ফেলে রেখে খুলনার ওই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়।

জেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা পাসপোর্ট অফিসে সিরিয়াল দিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপ সহ্য করতে হয় পাসপোর্ট প্রার্থীদের। শুধু তাই নয় এখানে গিয়ে অনেকেই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে যান। ফলে গুণতে হয় অনেক বেশি অর্থ।

এদিকে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো) আওতাভুক্ত বাগেরহাটের বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ প্রচলিত নিয়মে জেলা পাসপোর্ট অফিসকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত সংযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তারা জেলা পাসপোর্ট অফিসকে ‘জমাভিত্তিক পদ্ধতি’তে অর্থাৎ নিজস্ব অর্থে ট্রান্সমিটারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সংযোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রস্তুত কাজের জন্য জেলা কার্যালয়ে তিনমুখী (থ্রি ফেজ) সংযোগসহ ৫০ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সরবরাহ সংযোগ প্রয়োজন। কিন্তু বাগেরহাট বিদ্যুত বিভাগ জানিয়েছে যে, তাদের এ ধরণের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সংযোগ দেয়ার সক্ষমতা নেই। পাসপোর্ট বিভাগ নিজস্ব ব্যয়ে ট্রান্সমিটারসহ আনুসাংগিক যন্ত্রপাতি কিনে দিলে তারা এ সংযোগ দিতে পারবেন।

এভাবে ৫০ কিলোওয়াটের সংযোগ নিতে গেলে ব্যয় হবে অন্তত ৭ লাখ টাকা। কিন্তু এ জন্য জেলা পাসপোর্ট অফিসের কাছে এত টাকা বরাদ্দ নেই।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওসি (ওয়াচ) মো. ওবায়দুল হক চৌধুরী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘প্রতি মাসে আমরা গড়ে সাড়ে আটশ’ এমআরপি এর আবেদন তদন্ত করি। খুলনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় আমাদের কাছে এসব আবেদন পাঠায়।

বাগেরহাটে এমআরপি প্রকল্পের কাজ শুরু করা গেলে সাধারণ মানুষ সময় ও ব্যয়ের দিক থেকে অনেক উপকৃত হবে বলে জানা তিনি।

Bagerhat-Pasport-Office-Pic -(3)মো. খোরশেদ আলম আরও বলেন, ২০১২ সাল থেকে বাগেরহাটে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট প্রকল্পসহ জেলা পাসপোর্ট অফিস চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। এখন প্রয়োজনীয় সব ধরণের যন্ত্রপাতি ও লোকবল আছে। শুধুমাত্র উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘ঝালোকাঠি, পিরোজপুরসহ কয়েকটি জেলায় ৩০ থেকে ৪০ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জেলা পাসপোর্ট অফিস ও যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বিদ্যুত বিভাগ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঐ সংযোগ দিয়েছে। কিন্তু বাগেরহাটে আমি সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পাচ্ছি না।’

এব্যাপারে বাগেরহাট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আনোয়ারুল হক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘এ ধরণের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সংযোগ দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই। জেলা পাসপোর্ট কর্মকর্তার লিখিত আবেদনটি খুলনাস্থ ওজাপাডিকো কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘জমাভিত্তিক সংযোগ’ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ফলে অন্তত ত্রিশ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সংযোগের জন্য পাসপোর্ট অফিসকে এখন কম-বেশী পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। বিষয়টি আমি বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালককে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি।’

এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এমন জটিলতায় আটকে থাকা বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে তাগিদ দিয়েছেন বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ।

০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ :: আহাদ হায়দার,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এএইচ/আই হক-এনআএডিটর/বিআই
** ১৮ মাসেও শুরু হয়নি বাগেরহাটে পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম

About আহাদ হায়দার