প্রচ্ছদ / খবর / রায়ে খুশি বাগেরহাটবাসী, দ্রুত কার্যকরের দাবি

রায়ে খুশি বাগেরহাটবাসী, দ্রুত কার্যকরের দাবি

Bagerhat-Pic-1(11-08-2015)একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকার সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ বাগেরহাটের মানুষ।

দ্রুত এই রায় কার্যকরে সরকারের প্রতি দাবিও জানান তারা।

রায় ঘোষণার আগে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকায়।

সরেজমিনে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রায়ের খবর জানার জন্য সকাল থেকে সবাই অনলাইন, টেলিভিশনসহ অনান্য গণমাধ্যমে চোখ রাখছিলেন।

   | ‘কসাই’ সিরাজের মৃত্যুদণ্ড, আকরামের আমৃত্যু কারাদণ্ড

রায় শোনার পর উল্লাসে ফেটে পড়েন মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল বের করেন তারা।

Bagerhat-Pic-2(11-08-2015)মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে একই এলাকায় এসে শেষ হয়।

মিছিল শেষে উপস্থিত সবার মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত এই মিছিলে সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন ও মীর শওকাত আলী বাদশাশহসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

   | কৈশোরেই যুদ্ধাপরাধী আকরাম

রায়ে সর্বচ্চ সাজায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন একাত্তরে এই রাজাকারদের নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার বাগেরহাটের গোটাপাড়া, শাঁখারিকাঠী, রঞ্জিতপুর, ডাকরার, বেসরগাতী, কান্দাপাড়া, টেংরাখালী, তেলিগাতী, চুলকাঠি, ঘনশ্যামপুর ও আশপাশের মানুষ।

বাগেরহাট সদরের মির্জাপুর গ্রামের গোটাপাড়া গ্রামের হারেজউদ্দিন শেখ ও সালেহা বেগমের ছেলে শেখ সিরাজুল হককে স্থানীয় বাসিন্দারা একসময় চিনতেন সিরাজ মাস্টার নামে। একাত্তরে বেয়নেট দিয়ে গলা কেটে বহু মানুষকে হত্যার কারণে তার নাম হয় কসাই সিরাজ

মুক্তিযুদ্ধের পর সিরাজ নিজ গ্রাম গোটাপাড়ায় আসেনি বলে স্থানীয়রা জানান।

Nurzahan-Begom Bagerhatমঙ্গলবার দুপুরে গোটাপাড়ায় সিরাজ মাস্টারের বাড়ি গিয়ে ওই পরিবারের কাউকে পাওয়া না গেলেও দূর সম্পর্কের চাচি নুরজাহান বেগমের (৭২) সঙ্গে কথা হয় বাগেরহাট ইনফো ডটকমের।

   | ‘মাস্টার’ থেকে ‘কসাই’ সিরাজ

সাংবাদিকর দেখে দৌড়ে এসে তিনি বলেন, “আমি কমু আমি কমু। রাজাকার সিরাজ একাত্তরে আমাকেও হত্যা করতে চাইছিল। সে সময় পাশের বাড়ির এক মহিলা আমাকে কাঠের ঘরে ‘দাইরের’ ভেতরে (জ্বালানির জন্য চেরাই করা কাঠ) চাপা দিয়ে রাখছিল।”

“আরেকদিন সিরাজের হাত থেকে বাঁচতি নদীতে যাইয়ে নাক সমান পানিতে ডুইবে থাকে প্রাণ বাঁচাই।

“আমাগো না পাইয়ে সিরাজ ও তার রাজাকার বাহিনী ঘর বাড়ি জ্বালায়ে দেয়।”

গোটাপাড়া গ্রামের একরাম হোসেন, সামাদ খান, নাহিদ হোসেন, ইয়াকুব আলীসহ অনেকে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, একাত্তরে রাজাকার সিরাজের নির্যাতনে তারা কেউ ভাই, কেউবা বাবা, চাচা, দাদা হারিয়েছেন।

| যুদ্ধাপরাধ: বাগেরহাটের আব্দুল লতিফের মৃত্যু

তাদের নির্যাতনের হাত থেকে শিশু-যুবক-বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি বলে জানান তারা।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “কসাই সিরাজ এই এলাকায় মানুষের উপর নির্মম নির্যার্তন ও হত্যাযঞ্জ চালিয়ছে। তার ফাঁসির আদেশও কম বলে মনে হয়।”

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাগেরহাট সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সহকারী কমান্ডার ও মামলার সাক্ষী মোস্তাফিজুর রহমান বাদশা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, “কসাই সিরাজের ফাঁসির আদেশে আমরা খুশি, কিন্তু আকরাম হোসেনেরও ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল।”

জেলার ভিন্ন এলাকায় এখনও পালিয়ে থাকা সিরাজ মাস্টারের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।

১১ আগস্ট :: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ