প্রচ্ছদ / খবর / সাগরে দস্যুদের হামলায় ৯ জেলে আহত, নিখোঁজ ১

সাগরে দস্যুদের হামলায় ৯ জেলে আহত, নিখোঁজ ১

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

বঙ্গোপসাগরে একটি জেলে ট্রলারে জলদস্যুদের হামলায় ৯ জেলে আহত হয়েছেন; এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন একজন।

মঙ্গলবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের ১নং ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে ‘এফবি সুমন’ নামের একটি ফিসিং ট্রলারে হামলার এ ঘটনা ঘটে বলে সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানিয়েছেন। এ সময় দস্যুরা ট্রলারটি থেকে জালসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেয় বলে অভিযোগ হামলার শিকার জেলেদের।

নিখোঁজ হওয়া জেলের নাম জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার।

বুধবার রাতে ট্রলারটির বাকি জেলেরা সাগর থেকে ফিরেছে। আহত ৯ জেলে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। তবে কোন দস্যু বাহিনী ওই হামলা চালিয়েছে তা তারা বলতে চাননি ফিরে আসা জেলেরা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেলেরা হলেন- ফুল মিয়া (৩৫), রনি (১৯), সহাদেব (৫০), বেলাল (২৭), আফজাল (৫৫), রিয়াদুল (৪৮), আবু সালেহ্ (৩০), মনির খাঁন (২৬) ও হেলাল খাঁন (১৮)। তাদের সবার বাড়ি শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর তাফালবাড়ি, ঝিলবুনিয়া ও পূর্ব খাদাসহ বিভিন্ন গ্রামে।

হামলার শিকার এফবি সুমন ফিশিং ট্রলারের মালিক উপজেলার খাদা গ্রামের কামাল মৃধা বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে মাছ শিকার করার ট্রলারের জেলেরা সাগরে জাল ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় বিপরীত দিক থেকে হঠাৎ একটি ট্রলার আমাদের ট্রলারের কাছে এসে দাঁড়ায়। ওই ট্রলারটিতে ২০ থেকে ২২ জনের একটি সশস্ত্র দস্যুদল আমাদের ট্রলারে উঠে সবাইকে এলাপাথাড়ি মারপিট করতে থাকে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা জেলে মনির, রনি, আফজাল ও জাহাঙ্গীর হাওলাদার সাগরে ঝাঁপ দেয়।

‘তারা (দস্যুরা) আমার ট্রলারে থাকা ৩০টি জালসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়’ বলে অভিযোগ ওই ট্রলার মালিক।

দস্যুরা চলে গেলে সাগরে ঝাঁপ দেওয়া চার জেলের মধ্যে মনির, রনি, আফজাল ট্রলারে উঠতে সক্ষম হলেও জাহাঙ্গীর হাওলাদার নামে একজন নিখোঁজ হন। তাকে খুঁজে না পেয়ে বাকিরা ট্রলার নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছি।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, সাগরে দস্যুদের হামলায় আহত ৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের শরীরে বিভিন্ন স্থানে লাঠিসোটার আঘাতের ফুলে আছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সবাই আশংকামুক্ত।

কোস্টগার্ডের শরণখোলা স্টেশনের কমান্ডিং অফিসার মাহবুব আলম বলেন, সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেদের কাছ থেকে আমরা তথ্য নিচ্ছি। কোন জলদস্যু বাহিনী ওই জেলেদের উপর হামলা চালিয়েছে তা খুঁজতে অভিযান শুরু করছি।

এদিকে ওই ঘটনার পর জেলেদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শরণখোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলে ট্রলার মালিকদের সংগঠন শরণখোলা উপজেলা মৎস্য সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতি সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম কালাম। ইলিশ মৌসুমে সাগর ও উপকূলের নদ-নদীতে মাছধরা ট্রালারগুলোতে দস্যু হামলার অভিযোগ করে বলেন, সাগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ব্যবস্থা জিমিয়ে পড়ায় জলদস্যুরা অর্তকিত হামলা চালিয়ে ট্রালারের লাখ লাখ টাকার জাল ও ইলিশ লুটে নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় দস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন সময় সাগরে গিয়ে নিখোঁজ ও নিহত জেলে পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরন দেবার আহ্বান জানায় সমিতি।

লিখিত বক্তব্যে ট্রলারগুলোতে জিপিএস, ওকিটকি সেট, লাইফ জ্যাকেট ও বয়াসহ নানা উপকরনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় জেলেরা যাতে অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করতে না পারে তা বন্ধের দাবি জানানো হয়।

এইচ//এসআই/বিআই/০৪ অক্টোবর, ২০১৮

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ