প্রচ্ছদ / খবর / বাগেরহাট / কচুয়া / ঘরের সামনে ঘোড়া !

ঘরের সামনে ঘোড়া !

ঘোড়া নিয়ে এক ঘরের সামনে দাড়িয়ে কিশোর নজরুল। ছবি : আরিফ সাওন/বাগেরহাট ইনফো ডটকম।‘বুসিফেলাস’। যদিও বদমেজাজী, তবুও আলেকজান্ডারের কথা শুনতো। একে নিয়ে মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপের ছোট ছেলে আলেকজান্ডার অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। রাজা ফিলিপ মরা যাবার পর আলেকজান্ডার রাজা হয়। আর তখন তার সঙ্গী ছিল ‘বুসিফেলাস’। তাকে নিয়ে আলেকজান্ডার তার সৈন্য বাহিনীকে মিশর ও ভারত পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। খৃষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে বুলিফেলাস ভারতে মারা যায়। বুলিফেলাসের প্রতি আলেকজান্ডারের সম্মাণ আর কৃতজ্ঞতা কমতি ছিল না। তাই তিনি বুলিফেলাসের নামানুসারে একটি নগরীর নামকরণ করেন।

এই বুসিফেলাস হচ্ছে একটি ঘোড়ার নাম। ঘোড়াই ছিল একসময় সম্ভ্রান্তের যাতায়াতের বড় মাধ্যম। রাজকার্জ পরিচালনা ও যুদ্ধবিগ্রহ সহ বিভিন্ন কাজে ঘোড়ার প্রয়োজন ছিল। তাই ঘোড়ার কদরটাও একটু বেশি ছিল।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশে ঘোড়ার কদর কমেছে। সচরাচর চোখেই পড়ে না। তবে বছরে দু-একবার এদের দেখা মেলে, মেলার মাঠে; যদি ঘোড়ার দৌড় প্রাতযোগিতা থাকে। আর তা না হলে তো প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া মাল গাড়ি টানতেও দেখা যেতে পারে দেশের কোন না কোন অঞ্চলে। ঢাকা শহরেও দু একটি ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়তে পারে।

ঘোড়া দেখলে পিঠে উপঠে মন চায়। কয়েকবছর আগে ঢাকায় একবার ঘোড়ার গাড়িতে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল,হয়তো আমি কোন রাজ্যের রাজা, যাচ্ছি।

ঘোড়া নিয়ে এক ঘরের সামনে দাড়িয়ে কিশোর নজরুল। ছবি : আরিফ সাওন/বাগেরহাট ইনফো ডটকম।
ঘোড়া নিয়ে এক ঘরের সামনে দাড়িয়ে কিশোর নজরুল। ছবি: উলফাতুন্নেসা ছন্দা/বাগেরহাট ইনফো ডটকম।

২৮ মার্চ। সকাল সাড়ে ৮টা। বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আফরা গ্রামের বাসিন্দা আমি। রওনা দিচ্ছি ঢাকার উদ্দেশে। এমন সময় আমাদের ঘরের সামনে এলাকার ছোট ছেলে-মেয়েদের হৈই চৈই। দরজা খুলে দেখি ঘরের সামনে ঘোড়া। একটি ছেলে বলল,‘ভাই ঘোড়া আইছে ,চাইতি। কয়ড়া চাল দেন’। শুনে আমি অবকা বলে কি! ঘোড়া এসেছে ভিক্ষা চাইতে,তাও আবার বাড়িতে!

কথা হল ঘোড়ার সাথে থাকে ছোট ছেলে নজরুলের(১৩) সাথে। সে জানায়, তার বাবা একজন দিনমজুর। তাদের বাড়ি বরগুনায়। ঘোড়া দিয়েই তাদের সংসার চলে। তারা একদলে ছয় জন। সবার বাড়ি বরগুনায়। ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতাই তাদের আয়ের উৎস।

সম্প্রতিক ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা তেমন একটা হয় না। তাই বাঁচার তাগিদে বাড়ি বাড়ি ঘোড় নিয়ে গিয়ে ঘোড়া দেখিয়ে সাহায্য চাইছে। সারা দিনে যা পায়, রাতে তা নিয়ে সবাই এক জায়গা আসে। স্থায়ী কোন জায়গায় থাকে না। যেখানে রাত সেখানে কাত-এমনটা অবস্থা তাদের।

ঘোড়া চাল খাচ্ছে আর পাশে দাড়িয়ে দেখছেন শিশোর নজরুল। ছবি : আরিফ সাওন/বাগেরহাট ইনফো ডটকম।
ঘোড়া চাল খাচ্ছে আর পাশে দাড়িয়ে দেখছেন শিশোর নজরুল। ছবি : উলফাতুন্নেসা ছন্দা/বাগেরহাট ইনফো ডটকম।

আমার সময় না থাকার জন্য দাড়াতে এবং বিস্তারিত জানতে পারলাম না। আমার কথার ফাঁকে মা কুলায় করে চাল আনলে, তা ঘোড়ায় খেয়ে নিল। পরে আবার চাল এনে ছেলেটির ব্যাগে দিল। আমি রওনা দেয়ার পর ছেলেটি ঘোড়টিতে আসতে বলে হাঁটা দিলে ঘোড়াটিও তার সাথে সাথে হাঁটা দিল। ছেলেটি যে দিকে গেল ঘোড়াটিও তার পিছু পিছু গেল।

কদর কমলেও চতুষ্পদী  মুনিবভক্ত এই প্রাণী দিয়ে এখন সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে।আবারও হয়তো বেড়ে যাবে ঘোড়ার কদর।

০৬ এপ্রিল ২০১৪ :: আরিফ সাওন, হেড অব নিউজ,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।

About Arif Shaon