প্রচ্ছদ / খবর / মরছে বিলুপ্তপ্রায় গন্ধগোকুল

মরছে বিলুপ্তপ্রায় গন্ধগোকুল

নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম

রাতের বেলাই বেশি চলাচল প্রাণীটির। ঢুকে পড়েছিল একটি ধান ক্ষেতে। কৃষির জন্য উপকারি হলেও মরতে হলো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন্যপ্রাণী গন্ধগোকুলটিকে।

বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সকালে শহরের হরিণখানা এলাকার পিসি কলেজ সড়কে কে বা কারা ফেলে যায় মৃত গন্ধগোকুলটি। প্রাণীটির মুখ দিয়ে তখনও রক্ত ঝরছিল।

স্থানীয়রা জানায়, এক ব্যক্তির ধান ক্ষেতে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে মারা পড়ে প্রাণীটি। সড়কের কারিগরি কলেজ সংলগ্ন কালভার্টের উপর প্রাণীটিকে দেখে ‘মেছোবাঘ’ ভেবে কয়েকজন খবর দেয় বন বিভাগকে।

তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় ভাবে ‘খাটাশ’ নামে অধিক পরিচিত প্রাণীটি আসলে ‘গন্ধগোকুল’ (Common Palm Civet)।

স্থানীয় কয়েক জন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, তিনদিন আগেও একই ধরণের একটি প্রাণী মেরে এই সড়কের ধারে ফেলে যাওয়া হয়। তিন দিনের মাথায় আরও একটিকে হত্যা করে এখানে ফেলে যাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বন বিভাগের একজন পরিচ্ছন্নকর্মী কালভার্টের নিচ দিয়ে প্রবাহিত খালের পাড়ে প্রাণিটিকে মাটি চাপা দেয়। তবে বন্যপ্রাণিটির মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্ত করেনি বন বিভাগ।

ভৈরব নদের শাখা খালটি সরু হয়ে শহরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। শুকনো মৌসুমেও পানি ক্ষণ প্রবাহ থাকা খালটির দু পাড়ে নানা গাছ লতাপাতা।

সড়কে যে অংশে মৃত গন্ধগোকুলটি ফেলে যাওয়া হয় তার পাশের দু’জন বাসিন্দা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পাশের একটি ধান ক্ষেতে ঢুকে প্রাণীটি মারা পড়েছে। ওই ক্ষেতের বৈদ্যুুতিক ফাঁতে এটি ধরাপড়ার পর প্রাণীটি হত্যা করা হয়। তিনদিন আগেও একই রকম দেখতে একটি প্রাণী আটকা পড়ে মারা যায় সেখানে। সেই প্রাণীটিকেও এই খালে ফেলে যাওয়া হয়।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে মৃত গন্ধগোকুলটিকে মাটি চাপা দিয়ে ফিরছিলেন বন বিভাগের কর্মী সুবাস সরদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি খাটাশ ছিল। অফিস থেকে বলায় আমি প্রাণীটিকে মাটি চাপা দিয়ে যাচ্ছি।

প্রাণীটি কিভাবে মারা যায়, ময়না তদন্ত হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়না তদন্ত হয় নি। আর বেশি কিছু জানিনা।

উইকিপিডিয়া বলছে, গন্ধগোকুল নিশাচর প্রাণী। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে এই প্রাণীটি। তবে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসানের ভাষ্য, এটি কোন বিলুপ্ত প্রায় প্রাজাতির প্রাণী নয়। সচারচারই দেখা মেলে।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, গন্ধগোকুল বন্যপ্রাণী। আইন অনুয়ায়ী যে কোন বন্যপ্রাণী হত্য নিষিদ্ধ।

ডিএফও নিশ্চিত করেন, প্রাণীটি মেছোবাঘ নয়। এটি খাটাশ (গন্দগোকুল)। কেউ মেরে প্রাণীটিকে রাস্তায় ফেলে যায়। তাকে উদ্ধার করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।

গন্ধগোকুল বাগেরহাট অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশি পরিচিত ‘সাইরেল’ নামে। ‘ভোন্দর’, ‘নোঙর’, ‘গাছ খাটাশ’ তাড়ি বা টডি বিড়াল (Toddy Cat) নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম প্যারাডোক্সুরাস হারমাফ্রোডিটাস Paradoxurus hermaphroditus।

এরা মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের গাট্টাগোট্টা দেহটি স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে এই প্রাণীর গন্ধগ্রন্থি থাকে।

বন্যপ্রাণি গবেষক ও লেখক আ ন ম আমিনুর রহমান দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত (১১.০৯.২০১২) তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, গন্ধগোকুল বর্তমানে অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। পুরোনো গাছ, বন-জঙ্গল কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ জানান, একসময় এটি গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র দেখা গেলেও এখন এর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। দেখতে কিছুটা হিংস্র ধরনের হওয়ায় মানুষ এই প্রাণীটি দেখতে পেলেই পিটিয়ে মেরে ফেলে। অথচ ইঁদুর ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে এরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এজি//এসআই/বিআই/২২ মার্চ, ২০১৮
** গন্ধগোকুলের চামড়াসহ গ্রেপ্তার ১

About Inzamamul Haque